বিল্লাল বিন কাশেম
রমজান হচ্ছে আরবি বারো মাসের মধ্যে নবম মাস। মুসলিম বিশ্ব তথা মুসলাম সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে সম্মানিত মাস। রোজা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দিন। আর আরবিতে এর নাম সাওম বা সিয়াম। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা। ইসলামের বিধান অনুসারে, প্রতিটি সবল মুসলমানের জন্য রমজানে রোজা রাখা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় ইবাদত।
পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহপাক এরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোজা/সিমাম ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তিদের উপর; যাতে করে তোমরা মুত্তাকি/তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ -সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩। মনে রাখতে হবে, রোজা বা সাওম তাদের ওপর ফরজ; যারা প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন ও শারীরিকভাবে রোজা পালনে সক্ষম। যদি কোন ব্যক্তি সফর অবস্থায় থাকেন অথবা অসুস্থতার কারণে রোজা পালনে অক্ষম হন; তবে তিনি রোজা পরে কাজা আদায় করতে পারবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি সুস্থ হয়ে কাজা আদায় করার সুযোগ বা সামর্থ্য ফিরে না পাওয়ার আশঙ্কা করেন, তবে তিনি রোজার ফিদইয়া বা একজন গরীবকে এক ফিতরার সমান খাবার খাওয়াবেন অথবা প্রদান করবেন।
সুরা-২ বাকারা ১৮৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেন, “রোজা নির্দিষ্ট কিছু দিন। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে পরে একই সংখ্যক দিন পূরণ করবে। আর যাদের জন্য রোজা রাখা ভীষণ কষ্টের, তাদের জন্য উপায় রয়েছে; তারা একই সংখ্যক দিন একজন গরিব মানুষকে খাওয়াবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়তি ভালো কাজ করে, সেটা তার জন্যই কল্যাণ হবে। রোজা রাখাটাই তোমাদের জন্যই ভালো, যদি তোমরা জানতে। [আল-বাক্বারাহ ১৮৪] আসন্ন রমজান একেবারেই সন্নিকটে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৪ কিংবা ২৫ এপ্রিল শুরু হবে রমজান। রহমত, ইবাদত আর মাগফিরাতের এ রমজান মাসে বেশকিছু ইবাদতে ব্যাপক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রমজানের তারাবি হলো সন্ধ্যাকলীন বিশেষ ইবাদত তথা নামাজ।
বিশ্বব্যাপী দীর্ঘ সময়ে পবিত্র কুরআন খতমের মাধ্যমে এ নামাজ আদায় করা হয়। তারাবিহ নামাজের সময় মসজিদে ব্যাপক জনসমাগম হয়। বিশ্বব্যাপী লকডাউন পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে মানুষ। বর্তমান পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে কোনো দেশই যথাযথ মর্যাদায় তারাবি নামাজ আদায় করতে পারবে না। তারাবির যে ঐতিহাসিক ঐতিহ্য সেটা কিছুটা ম্লান হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এটি করতে হবে। বাড়িতে কিংবা ঘরে একাকি স্বল্প পরিসরে বা বাসার সবাইকে নিয়ে জামাতের সাথে আদায় করতে হবে তারাবির নামাজ। এ জন্য এখন থেকেই প্রত্যেক মুমিন মুসলমানকে প্রস্তুতি নিতে হবে। করোনা সংক্রমণের কারণে এবার বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই চলছে লকডাউন। কেউ চাইলেও মসজিদে নামাজের জামাআতে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাতে সবাইকে ব্যক্তি উদ্যোগে নিরাপদ পরিবেশে স্বল্প আকারে ঘরেই নামাজ আদায় করতে হবে।
পবিত্র রমজানে ব্যাপক জনসমাগমের মাধ্যমে অনেক ধর্মীয় আলোচনা কিংবা দোয়া অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। বিভিন্ন সংগঠন রমজান শীর্ষক আলোচনা ও ইফতার মাহফিল আয়োজন করে। অনেকে সেহরি রাত্রি নামের অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এবারের রমজানে এসব অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকতে হবে। এদিকে, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ সবাইকে বাসায় তারাবি পড়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। মসজিদে দুইজন হাফেজ’সহ মোট ১২ জন তারাবি পড়বেন।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়েরর সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে রমজান মাসে মুসুল্লিদের বাসায় তারাবির নামাজ আদায়ের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে ১০ জন মুসুল্লী + ২ জন হাফেজ সহ মোট ১২ জনের অংশগ্রহণে রমজান মাসে মসজিদ সমুহে তারাবির নামাজ আদায় করা যাবে। একই সাথে ইতোপুর্বে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জারিকৃত মসজিদে জু’মা ও জামাতেে নামাজ আদায় বিষয়ক নির্দেশনা কার্যকর থাকবে। এছাড়া রমজান মাসে ইফতার মাহফিলের নামে কোন ধরনের সমাবেশ করা যাবেনা। এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ শুক্রবার একটি সার্কুলার জারি করেছে।
লেখকঃ বিল্লাল বিন কাশেম উপ-পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। bellalbinquashem@gmail.com.