সারা দেশের থানাগুলোতে ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ২৬ হাজার ৬৯৫টি ধর্ষণের মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ।
বুধবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চে জমা দেয়া প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। হাইকোর্টের আদেশে পুলিশ সদর দপ্তর এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে।
সারা দেশে সংশ্লিষ্ট আদালত বা ট্রাইব্যুনালেও মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। তবে গত পাঁচ বছর কতগুলো মামলা আদালতে হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দেওয়া প্রতিবেদনে সে তথ্য আসেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনে নির্ধারিত ১৮০ দিনের মধ্যে টানা বিচার কাজে ধর্ষণের মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে কিনা, তা নিরীক্ষণ (মনিটরিং) করেত সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী অনীক আর হক। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান ও শাহিনুজ্জামান শাহিন।
অনীক আর হক পরে বলেন, গত পাঁচ বছরে আদালতে কতগুলো মামলা হয়েছে সে প্রতিবেদন দিতে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ দুই মাস সময় চেয়ছিল। আদালত ২৩ মে পরবর্তী তারিখ রেখেছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসহ সংশ্লিষ্ট সকল আদালতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তথ্য পেলেই আরেকটি প্রতিবেদন জমা দেবে রাষ্ট্রপক্ষ।
ধর্ষণের ঘটনায় সালিশকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার নির্দেশনা চেয়ে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছর ২১ অক্টোবর রুলসহ আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
আদেশে ধর্ষণের ঘটনায় গত ৫ বছর সারা দেশে থানা, আদালত, ট্রাইব্যুনালে কত মামলা হয়েছে, সে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া আইনে নির্ধারিত ১৮০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের মামলার নিষ্পত্তি ও টানা বিচার কাজ চালাতে উচ্চ আদালতের দেওয়া আগের রায়ের নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা বা বাস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে, তার অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতেও বলে হাইকোর্ট।
সে আদেশ অনুযায়ী পুলিশ সদর দপ্তর ও ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে থানাগুলোতে ২৬ হাজার ৬৯৫টি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর মধ্যে ২০১৬ সালে ৪ হাজার ৩৩১টি, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৬৮৩টি, ২০১৮ সালে ৪ হাজার ৬৯৫টি, ২০১৯ সালে ৬ হাজার ৭৬৬টি ও ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৬ হাজার ২২০টি মামলা দায়ের করা হয়।
এর মধ্যে কতটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে বা কতজনের সাজা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য এ প্রতিবেদনে আসেনি।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দেওয়া প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগের ফৌজদারী আপিল (৪৪১৭/২০১৬) মামলার রায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩১(ক) ধারা বিধান অনুসারে দাখিল করা প্রতিবেদনগুলো সমন্বয় করে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনার আলোকে মনিটরিং সেল গঠন করা হল।
৫ বছরের মামলার পরিসংখ্যানের বিষয়ে বলা হয়েছে, বিগত ৫ বছরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এবং থানায় কতটি ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছে তার সংখ্যা অত্র কোর্টে প্রেরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট বিভাগের বিচার শাখা হতে মহাপুলিশ পরিদর্শক এবং সংশ্লিষ্ট বিচারক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।