আমাদের জাতীয় ইতিহাসের নানা বাকে অনেক জাতীয় বীর সন্তান রয়েছেন, যাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো উচিত বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ১৯৪৭ উত্তর পূর্ব পাকিস্তান বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাজনৈতিক অভিযাত্রার এক নায়ক ছিলেন শামসুল হক।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনের যাদু মিয়া মিলনায়তনে আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ) ‘র প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক শামসুল হকের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গণতান্ত্রি ঐক্য আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভুলে যাওয়া আমাদের চরিত্রেরই একটি অংশ। আর এই অংশ হিসাবে আমরা অনেকেই ইচ্ছে করে ভুলে যাই ইতিহাসের অনেক নায়কদের। যারা ইতিহাস রচনা করেন তাদের অধিকাংশই যেন শাসকগোষ্টিকে সন্তুষ্ট করতেই ইতিহাস রচনা করেন। ফলে ইতিহাসের অনেক নায়কই চলে যান ইতিহাসের আড়ালে। আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে প্রায় বিস্মৃত এমনই একজন হলেন শামসুল হক; যিনি ছিলেন ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এই প্রতিষ্ঠাতা বা প্রথম সাধারণ সম্পাদক হয়েও রাজনীতির ইতিহাসের আড়ালেই রয়ে গেছে শামসুল হকের নাম। ১৯৪৭ পরবর্তী রাজনীতিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠক ছিলেন শামসুল হক। পাকিস্তান সৃষ্টিতে শামসুল হকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিযোগে শামসুল হক গ্রেফতার হন এবং কারাবরণ করেন। কারাগারে সরকারের অত্যাচারের ফলে ১৯৫৩ সালে অত্যন্ত অসুস্থ শরীর ও মানসিক ব্যাধি নিয়ে কারামুক্তি লাভ করেন। আর সে সময়ই তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার পরের ইতিহাস অত্যন্ত করুণ ও বেদনাদায়ক।
সভাপতির বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক শামসুল হকের চিকিৎসায় তার দল কোনো উদ্যোগ নিয়েছিল বলে কেউ জানে না। শামসুল হকের কথা এখন অনেকেই জানেন না। যে দল তিনি গড়েছিলেন, যে দলে তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ওই দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও তাকে ভুলে গেছে প্রায়। ঘটা কেউ শামসুল হকের জন্মদিন বা মৃত্যুদিনও পালন করে না। শামসুল হকের প্রথম জীবনে যতই বর্ণাঢ্য ও আলোকোজ্জ্বল হোক না কেন, শামসুল হকের শেষ জীবন ছিল কষ্টের ও মর্মান্তিক।
তিনি বলেন, এমন একদিন অবশ্যই আসবে যখন কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন আবেগ-কল্পনা-পুর্বনির্ধারিত ধারণা-দলীয় বা গোষ্ঠীগত দৃষ্টিভঙ্গি ও আচ্ছন্নতা- নেতা বা দলের প্রতি অন্ধভক্তিবাদ-আত্মমহিমার মোহ ইত্যাদির উর্দ্ধে উঠে নিরংকুশ সত্যের আলোকে প্রামান্য ইতিহাস লিখতে। নিশ্চিত যে ইতিহাস আবার পর্যালোচিত হবে। যার যা প্রাপ্য তাকে তা দেয়া হবে।
গণতান্ত্রিক ঐক্যের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজূ, বাংলাদেশ ন্যাপ ঢাকা মহানগর সভাপতি মো. শহীদুননবী ডাবলু, আবদুস সালাম প্রমুখ।