মোঃমিশন আলী ঝিনাইদহঃ
বর্তমানে জনপ্রিয় সবজি’র মধ্যে ক্যাপসিকাম অন্যতম। ক্রমেই বড় শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ছে প্রত্যন্তপল্লীর মাঠে ঘাটে। বাস্তবতার স্বপ্ন রাঙাতে পৌর এলাকার পাঠানপাড়া গ্রামে দৃষ্টিনন্দন ৪০ শতাংশ জমিতে দোল খাচ্ছে ক্যাপসিকামের আবাদ। শৈলকুপা কৃষি অফিসের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মসলেহ উদ্দিন তুহিন ও শিক্ষিত বেকার যুবক নেওয়াজ শরিফের তত্ত¡াবধানে গড়ে তোলা বাহারী ক্যাপসিকাম ক্ষেত নিয়ে স্থানীয়দের আগ্রহের শেষ নেই।
জানা যায়, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে পাশ করা ছাত্র উপজেলায় প্রথম মিষ্টি মরিচ চাষে ঝুঁকে পড়ায় আগ্রহী হচ্ছে আরো অনেকে।
সরেজমিন পরিদর্শনে নেওয়াজ শরিফ জানায়, করোনাকালীন মহামারীর মধ্যে একদিকে অর্থাভাব অন্যদিকে বেকারত্বের ফাঁদে পড়ে তার সহযোগি বন্ধু রাশেদুল আলম বনির সাথে আলোচনা করে আদর্শ চাষী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। প্রথমে তার বাবা শরিফুল ইসলাম রাজি না হলেও একপর্যায়ে ছেলের স্বপ্ন পূরনের জন্য ৫ হাজার চারা লাগানোর উপযোগি জমি তৈরিতে সাহায্য করেন। আগামী ফেব্রæয়ারি মার্চ মাসের মধ্যেই ক্ষেতে থেকে সম্পূর্ণ ক্যাপসিকাম সংগ্রহ করা যাবে। সে বিবেচনায় তাইওয়ানের এ জাত থেকে অন্তত ৫ টন ফল উত্তোলনের লক্ষমাত্রা রয়েছে। যার স্বাভাবিক বাজার মূল্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তিনি আরো জানান, বেঁলে দোয়াশ মাটির এ মিষ্টি মরিচ থেকে ৪ মাসে বিশাল অংকের টার্গেটকে কাজে লাগিয়ে সে হতে চায় সফল চাষী। পরিচ্ছন্ন পরিপাটি ক্ষেতের চারিদিকে বেষ্টনী, রয়েছে সেচ ব্যবস্থা ও পাহাড়াদার। মেধা শ্রম ও সাধনার সমন্বয় ঘটিয়ে নেওয়াজ শরিফ জানায়, । তার বিশ^াস সাবলম্বী হওয়ার জন্য শুধু চাকুরিতে নয় কৃষিতেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। একারনে যথার্থভাবে লেখাপড়াকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি খামার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে তার নিরন্তর যাত্রা শুরু হয়েছে। দেশে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, মিষ্টি মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও বর্তমানে এর চাষ প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে বড় বড় শহরের আশেপাশে সীমিত পরিসরে কৃষক ভাইয়েরা এর চাষ শুরু করেছে। যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে হচ্ছে। এ ছাড়া মিষ্টি মরিচের বিদেশে রপ্তানীর সম্ভাবনাও প্রচুর। সারা বিশ্বে টমেটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ বা ক্যাপসিকাম। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ’সি’ সমৃদ্ধ মিষ্টি মরিচ খাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ আকরাম হোসেন জানান, অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ক্যাপসিকাম চাষের উপযোগি সময়। আগে থেকে তৈরি করে রাখা বীজতলায় ১০ সেমি. দূরে দূরে লাইন করে বীজ বুনতে হবে। ৭-১০ দিন পর চারা ৩-৪ পাতা হলে মাঝারি আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা স্থানান্তর করতে হবে। প্রতিটি বেড চওড়া ২.৫ ফুট মাঝখানে নালা রাখা দরকার। সাধারণত ৩০ দিন বয়সের চারা তৈরি করা বেডে ১.৫ ফুট দূরে দূরে লাইনে রোপণ করা হয়। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায় বলে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে রাখলে ভেতরের তাপমাত্রা বেশি থাকে। যেহেতু, ক্যাপসিকাম খরা ও জলাবদ্ধতা কোনটাই সহ্য করতে পারে না, তাই প্রয়োজন অনুসারে জমিতে সেচ দিতে হবে। কোন গাছে ফল ধরা শুরু হলে খুঁটি দিতে হবে যাতে গাছ ফলের বারে হেলে না পড়ে। জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। তিনি বলেন পাঠানপাড়া গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক নেওয়াজ শরিফের ক্ষেতটি নিয়মিত দেখভাল করা হয়। এখান থেকে বহু যুবক কৃষিকর্মীর সাথে পরামর্শ করে অনুপ্রানিত হবে মনে মনে করি।