নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় হানিফ পরিবহনের ড্রাইভারসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ড্রাইভার মো. জামাল হোসেন, সুপারভাইজার মো. জনি ও হেলপার ফয়সাল হোসেন। তাদের মধ্যে জামাল ও ফয়সাল সহোদর
রবিবার দুপুরে ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে সাজা পরোয়ানায় দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার রায় শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পায়েলের বাবা ও মা। তারা জানিয়েছেন, পৈশাচিক কায়দায় তাদের ছেলেকে হত্যা করা হয়। এজন্য তারা দ্রুত খুনিদের ফাঁসি কার্যকর চান।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিনের সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল। ২৩ জুলাই মুন্সীগঞ্জ উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচে খাল থেকে পায়েলের লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ।
এরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে তাদের জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানায়, গজারিয়া এলাকায় গাড়ি যানজটে পড়ায় প্রস্রাব করার কথা বলে বাস থেকে নেমেছিলেন পায়েল। বাস চলতে শুরু করলে তিনি দৌড়ে এসে ওঠার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সংজ্ঞা হারান। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তাকে হাসপাতালে নেয়ার বদলে দায় এড়াতে ভাটেরচর সেতু থেকে নিচের খালে ফেলে বাস নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন চালক ও সুপারভাইজার।
পায়েলকে অচেতন অবস্থায় সেতু থেকে খালে ফেলে দেয়ার আগে তার পরিচয় গোপন করতে বাসচালক মুখ থেঁতলে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করে তার পরিবার।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র পায়েলের বাসা চট্টগ্রামের হালিশহর সিডিএ আবাসিক এলাকায়। তার বাবা গোলাম মাওলা ও বড় ভাই গোলাম মোস্তফা কাতার প্রবাসী। বড় ভাইয়ের সন্তান হওয়ার খবরে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন পায়েল। সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পথেই ঘটে ওই ঘটনা।
পায়েলের মৃত্যুর পর তার মামা গোলাম সরোয়ার্দী বিপ্লব বাদী হয়ে চালক জামাল হোসেন, তার সহকারী ফয়সাল হোসেন ও সুপারভাইজার জনিকে আসামি করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় ওই হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। পরের বছর ২ এপ্রিল মামলাটির চার্জগঠন করে বিচার শুরু আদেশ দেন আদালত। চার্জশিটভুক্ত ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত। গত ৪ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ঠিক করেন বিচারক।