জিসান তাসফিক-
গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ২১ শে অক্টোবর। উন্মুক্ত ভাবে শিক্ষা বিস্তারের জন্য পৃথিবীর প্রত্যেকটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আজ অনন্য দৃষ্টি স্থাপন করেছে। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা হয়েছে যা সার্বজনিন স্বীকৃত। শিক্ষা তার মধ্যে অন্যতম। যেকোনো মানুষই শৈশব থেকে মৃত্যু পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে। যার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চালু হয় হাজার বছর আগেই। যার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে যার মধ্যে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশে তৃতীয় ও পৃথিবীতে অষ্টম বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষন শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে চলা বিশ্ববিদ্যালয়টি আজকে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষেপে বাউবি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে পরিচিত। খুব পরিচিতি পেলেও বাউবিকে অধিকাংশই মানুষই বুঝতে পারেন না। কেননা বাউবির মূল উদ্দেশ্য তথ্য ও প্রযুক্তিসহ সব মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা। বাউবি আইন ১৯৯২ এর ৯ ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার স্থাপনা বাউবিতে হয়েছে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা বলার কারণ আধুনিকতা বলতে আমরা বুঝি উন্নত প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, বিভিন্ন ডিভাইস, ডিজিটাল ক্লাসরুমসহ ইত্যাদির ব্যবস্থা। এসব মাধ্যম ব্যবহার করে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে তথা বাউবিতে শিক্ষাগ্রহণ করা যায়।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাউবি আলাদা কারণ বাউবিতে যেকোনো বয়সের মানুষ অধ্যয়ন করতে পারে। নিকটস্থ স্টাডি সেন্টার রয়েছে এবং রয়েছে দূরশিক্ষন শিক্ষা পদ্ধতি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোকে বাউবি স্টাডি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে ।
বর্তমানে গাজিপুরে বাউবির মূল ক্যাম্পাস, দেশের বিভিন্ন স্থানে ১২টি আঞ্চলিক ক্যাম্পাস ও ৮০টি উপ আঞ্চলিক ক্যাম্পাস বা কেন্দ্র রয়েছে। মূল ক্যাম্পাসে বর্তমানে এমবিএ, এমফিল, পিএইচডি চালু আছে। এছাড়া ঢাকা আঞ্চলিক ক্যাম্পাসে বাউবির নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ৮ টি অনার্স ও মাষ্টার্স কোর্সসহ মোট ১০ কোর্স চালু আছে। এছাড়াও ১৫শ’ এর অধিক স্টাডি সেন্টারে এসএসসি হতে এমবিএ পর্যন্ত অনেক কোর্স চালু রয়েছে। বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা, চাকুরীজীবি শিক্ষার্থী, নিয়মিত শিক্ষার্থী ও অনিয়মিতরা সেখানে অধ্যয়ন করতে পারে।
বাউবির শিক্ষার্থীদের পরিসংখানে দেখা যায়, অধিকাংশ শিক্ষার্থী কর্মজীবী কিংবা চাকুরীজীবী। কিন্তু সে অনুযায়ী বাউবিতে কারিগরি শিক্ষামুলক কোর্স চালু নেই। সাধারণ ডিগ্রী নিয়ে শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। বাউবি প্রায় ৬ লক্ষ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। যার বিশাল সংখ্যকই কর্মজীবী। আমাদের দেশের এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদেরকে তত্ত্বীয় নয় বরং কারিগরি শিক্ষাপ্রদান করা প্রয়োজন। একজন শিক্ষার্থী সাধারণত কাজ শেষে তত্ত্বীয় শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী কম হয় কারণ এটি তার কর্মে প্রয়োজন নেই। কিন্তু কর্মমুখী শিক্ষা হলে সেখানে শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করবে কারণ এটি তার কর্মজীবনে ফলপ্রসূ হনে। অন্যথায় শুধুমাত্র সনদের জন্য আসবে এবং অসাধু উপায় অবলম্বন করার চেষ্টাও করতে পারে।
এছাড়া কাঠামোগত দিক দিয়ে বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী বাউবি উন্নত হয়নি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে তারা অ্যাকাডেমিক পড়শোনার বাইরেও অন্যান্য শিক্ষাগ্রহণে যথেষ্ট সুযোগ পেয়ে থাকে। বাউবির শিক্ষার্থীদের জন্য এই সকল সুযোগ সুবিধা করা প্রয়োজন। প্রতিটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে বাউবির নিজস্ব অর্থায়নে কিংবা সরকারি বাজেটে উচ্চ শিক্ষার ক্যাম্পাস করা উচিত। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের সেমিনারে অংশগ্রহণ করবে।
এছাড়াও সল্পমেয়াদি প্রফেশনাল কোর্স চালু হতে পারে। প্রয়োজন আরও লাইব্রেরির ব্যবস্থা। ই-বুক আধুনিক ও সহজলভ্য করা প্রয়োজন। ই-বুকে শুধু বাউবি নয় দেশের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও এর সুবিধা নিতে পারবে। প্রতিটি উপ আঞ্চলিক কেন্দ্রে লাইব্রেরি স্থাপন করা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন। তাহলে বাউবিতে অধ্যয়নরত গরীব শিক্ষার্থীদের সেখানে গিয়ে কাজের ফাঁকে অধ্যয়ন করা সম্ভব হবে।
দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন যেটাকে অ্যালামনাই অ্যাসোশিয়েশন থাকে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়ন শেষে শিক্ষার্থীদের সাফল্য জানা যায়। দীর্ঘ ২৮ বছরেও বাউবিতে এমন সংঘ নেই। বাউবির কেন্দ্রীয়, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ে এটি করা যেতে পারে। পরিশেষে বলতে চাই যে দীর্ঘ ২৮ বছরের পদযাত্রায় বাউবি ও এর শিক্ষার্থীরা দেশের জন্য সম্পদ হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এটি আরও সম্মানিত স্থানে যেতে পারবে।
লেখক-
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ,
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়