ছোটবেলা থেকে জীবনের এখন পর্যন্ত কষ্ট করে গেলাম, কিন্তু ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না। দিনমজুরের কাজ করেই চলে সংসার। একদিন কাজ করতে না পারলে সংসার চলে না। বউ-বাচ্চাদের মুখে ঠিকমতো খাবার তুলে দিতে পারি না।
নিজের একটু জমি ছিল। সেটিও ফাঁকি দিয়ে নিয়েছে শরিকরা। এখন শ্বশুরবাড়ি এলাকায় অন্যের জমিতে ঘর করে থাকি। দিনমজুর বলে কেউ কখনও সহযোগিতাও করে না। এভাবেই জাগো নিউজের সঙ্গে মনের দুঃখ প্রকাশ করেন ৭০ বছর বয়সী দিনমজুর রইচউদ্দীন সরদার।
রইচউদ্দীন সরদার এখন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের খানপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়ে ও এক নাতিকে নিয়ে তার সংসার। তার বাড়ি সদরের আগরদাড়ি ইউনিয়নের নেবাখালী গ্রামে। বাবা নেজামউদ্দীন সরদারের মৃত্যুর পর ভাই ও চাচারা মিলে পৈতৃক জমি ফাঁকি দিয়ে নিয়েছে। এরপর থেকে শ্বশুরবাড়ি খানপুরে বসবাস করছেন তিনি।
রইচউদ্দীন বলেন, দিনমজুরের কাজ করতে করতে এখন আমার মাজা ও পায়ের ব্যথা বেড়েছে। ব্যথায় এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারি না। তবুও সংসারের ছয়টি মুখ আমার চালাতে হয়। ঘরটি ভেঙে গেছে। ঠিক করতে পারি না। চেয়ারম্যান, মেম্বারও সহযোগিতা করেন না। ঘরে একটি খাট ও ছোট ড্রামই আমার সারাজীবনের সম্বল।
রইচউদ্দীন সরদারের বড় ছেলে কবিরুল ইসলাম (১৮), মেজ ছেলে মনিরুল ইসলাম (১৪) ও ছোট ছেলে জামাল হোসেন (৮)। মেয়ে মাছুরা খাতুনের বয়স ১৫ বছর। বড় ছেলে কবিরুল ইসলাম ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ ও মোটরভ্যান চালান মাঝে মধ্যে।
মেজ ছেলে মনিরুল ইসলাম মাঝে মধ্যে বিভিন্ন দোকানে কাজ করে। সে অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন। মেয়ে মাছুরা খাতুন স্থানীয় একটি এতিমখানায় রান্নার কাজ করছিল। সেখানে থাকালীন গর্ভবতী হয়ে পড়ে মাছুরা। সে এখন একটি ছেলে সন্তানের জননী। এ ঘটনা নিয়ে আদালতে মামলা করেন রইচউদ্দীন। মামলাটি সাতক্ষীরা আদালতে চলমান।
খানপুর গ্রামে রইচউদ্দীনের প্রতিবেশী বাবর আলী জানান, ওরা খুব অসহায় মানুষ। দুই ছেলে মাঝে মধ্যে কাজ করে। ছোট ছেলেটি মাত্র আট বছর বয়সী। মেয়েটিরও একটি অঘটন ঘটেছে। গরিব মানুষের যেন দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা শিবপুর ইউনিয়নের মহিলা ইউপি সদস্য খালেদা আক্তার বলেন, রইচউদ্দীন গরিব মানুষ। তাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১০ টাকা চালের কার্ড ও বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে।
অসহায় দিনমজুর রইচউদ্দীনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, এক শতক জমির ওপর কুঁড়েঘরে বসতি পরিবারটির। বারান্দায় একটি খাট ও ঘরের ভেতর একটি ছোট প্লাস্টিকের ড্রামই তাদের সম্বল। বিভিন্ন মানুষের দেয়া জামা-কাপড়ই তাদের ব্যবহারের কাপড়। একটি স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিনও নেই পরিবারটির।
রইচউদ্দীনের স্ত্রী শাহিদা বেগম জানান, ওদের (সন্তানদের) বাপ কাজ করলে চুলা জ্বলে, না করলে জ্বলে না। কোনো রকমে বেঁচে আছি। এখন বয়স হয়েছে। মানুষজন কাজেও নিতে চায় না। যে কাজ পায়, সে কাজই করে। কাজের বিনিময়ে ১০০-১৫০ টাকা আবার কখনও ২০০ টাকা পায়। সেই টাকায়ই সংসার চলে আমাদের। খুব কষ্ট হয়, কিন্তু কি করবো। আমাদের ভাগ্য খারাপ।
শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।