মাজহারুল ইসলাম
অনেকে বলছেন মহামারীর চিন্তায়/ভয়ে বা হোম কয়ারেন্টাইনে থেকে অনেকেই হতাশাগ্রস্থ হতে পারেন। অনেক দেশ আশংকা করছে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে হতাশগ্রস্থ হয়ে—
কিন্তু বিপদে মুমিন বা মুসলিম কী হতাশ হবে? বিপদে মুমিন বান্দাদের কী করবে তা আল্লাহ বলে দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে—
১। হতাশ বা নিরাশ না হওয়াঃ
– হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ— “তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।” নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আল-যুমার ৫৩)
– তিনি বললেন, পালনকর্তার রহমত থেকে পথভ্রষ্টরা ছাড়া কে নিরাশ হয়? (সূরা হিজর ৫৬)
২। আল্লাহর উপর আস্থা রাখা-
– যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। (সূরা আল বাক্বারাহ ১৫৬)
৩। ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা-
– হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আল বাক্বারাহ ১৫৩)
– সে (ফেরাউন) বলল, আমি এখনি হত্যা করব তাদের পুত্র সন্তানদিগকে; আর জীবিত রাখব মেয়েদেরকে। বস্তুতঃ আমরা তাদের উপর প্রবল। মূসা (আঃ) বললেন তার কওমকে, “সাহায্য প্রার্থনা কর আল্লাহর নিকট এবং ধৈর্য্য ধারণ কর।” (সূরা আল আ’রাফ ১২৭-১২৮)
৪। বেশি বেশি তওবাহ করা-
– তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের উপর আযাব দেবেন না। (সূরা আল-আনফাল ৩৩)
– তারা কি একথা জানতে পারেনি যে, আল্লাহ নিজেই স্বীয় বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং যাকাত গ্রহণ করেন? বস্তুতঃ আল্লাহই তওবা কবুলকারী, করুণাময়। (সূরা আত তাওবাহ ১০৪)
৫। দোয়া করা— কাকুতি মিনতি করা-
– আর আমি আপনার পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতিও পয়গম্বর প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর আমি তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম যাতে— “তারা কাকুতি মিনতি করে।” (সূরা আল আন-আম ৪২)
– অতঃপর তাদের কাছে যখন আমার আযাব আসল, তখন কেন কাকুতি-মিনতি করল না ? বস্তুতঃ তাদের অন্তর কঠোর হয়ে গেল এবং শয়তান তাদের কাছে সুশোভিত করে দেখাল, যে কাজ তারা করছিল। (সূরা আল আন-আম ৪৩)
– আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম, কিন্তু তারা তাদের পালনকর্তার সামনে নত হল না এবং কাকুতি-মিনুতিও করল না। (সূরা আল মু’মিনূন ৭৬)
৬। ধৈর্য্য ধারণ করা-
– আর যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকেও আমি উত্তরাধিকার দান করেছি এ ভুখন্ডের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের যাতে আমি বরকত সন্নিহিত রেখেছি এবং পরিপূর্ণ হয়ে গেছে তোমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত কল্যাণ বনী-ইসরাঈলদের জন্য তাদের— “ধৈর্য্যধারণের দরুন”। আর ধ্বংস করে দিয়েছে সে সবকিছু যা তৈরী করেছিল ফেরাউন ও তার সম্প্রদায় এবং ধ্বংস করেছি যা কিছু তারা সুউচ্চ নির্মাণ করেছিল। (সূরা আল আ’রাফ ১৩৭)
– তবে যারা ধৈর্য্যধারণ করেছে এবং সৎকার্য করেছে তাদের জন্য ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান রয়েছে। (সূরা হুদ ১১)
৭। বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত এবং নামায প্রতিষ্ঠা করা-
– আর যেসব লোক সুদৃঢ়ভাবে কিতাবকে আঁকড়ে থাকে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে নিশ্চয়ই আমি বিনষ্ট করব না সৎকর্মীদের সওয়াব। (সূরা আল আ’রাফ ১৭০)
৮। ঈমান এবং পরহেযগারী মজবুত করা-
– আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। (সূরা আল আ’রাফ ৯৬)
– সুতরাং কোন জনপদ কেন এমন হল না যা ঈমান এনেছে অতঃপর তার সে ঈমান গ্রহণ হয়েছে কল্যাণকর? অবশ্য ইউনুসের সম্প্রদায়ের কথা আলাদা। তারা –“যখন ঈমান আনে তখন আমি তুলে নেই তাদের উপর থেকে অপমানজনক আযাব-পার্থিব জীবনে” এবং তাদের কে কল্যাণ পৌছাই এক নিধারিত সময় পর্যন্ত। (সূরা ইউনুস ৯৮)
লেখকঃ আইনজীবী ও ইসলামী চিন্তাবিদ