সময় চলে যায় সময়ের নিয়মে। সাগরে এসে যেমন নদী মেশে তেমন জীবনও চক্রাকারে তার চমক দেখায়। এই চমকের মাঝে অনেক সাধারন ও স্বাভাবিক বিষয়ও মাঝে মাঝে মনে হয় অতি চমৎকার। মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম আইন বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। তার সৃজনশীল ও চিন্তাশীল লেখার মাধ্যমে আইনের বিষয়সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সাধারণের কাছে বোধগম্য করেন সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে।। ফেরদৌসী আক্তার, শিক্ষক হিসেবে আছেন। আজ ৫ অক্টোম্বর তাদের বিবাহিত জীবনের ১২ বছর পূর্তি হচ্ছে। সোনায় সোহাগা, মানিক জোড় প্রভৃতি বাগধারা গুলো যেন তাদের সাথেই যায়। জীবনের নানা চড়াই উতরাইয়ে তারা পরস্পরের পাশে ছিলেন। তাদের দাম্পত্য জীবনের ১২ বছর পূর্তিতে কথা হয় জনাব তাজুল ইসলামের সাথে। কথোপকথনে এপিএসনিউজের প্রতিনিধি ছিলেন নূরুন্নবী সবুজ।
এপিএসনিউজ: একজন সাহিত্যের মানুষ আর একজন আইনের মানুষ তারপও আপনাদের এই দীর্ঘ দাম্পত্য, আইন আর সাহিত্য মিলে মিশে একাকার?
কারাগারকে মূলত সংশোধনাগার হিসেবে দেখা হয়। একজন অপরাধি সেখানে গিয়ে সংশোধিত হয়ে আসবে। আর এই সংশোধন হবার জন্য ভালো বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বিকার করতে পারবেনা। আসলে জীবনটাই তো জীবন্ত সাহিত্য। আর সমাজ সভ্যতার সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করেই তো আইন ও আইনের বিধান কাজ করে। সাহিত্য যেমন সামগ্রিক চিন্তা ও কাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে তেমনি আইন মানুষের আচরণের ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় অন্যের ক্ষতি বা বিরক্তি তৈরী না করে অন্যের প্রতি সহনশীল আচরণ করতে শিখায়। আর কোন না কোন ভাবে তো আইন ও সাহিত্য একে অপরের সাথে জড়িত।
এপিএসনিউজ: বাংলাদেশে বলা হয় কর্মজীবি মেয়েরা তেমন সংসারী হতে পারে না। মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে পাঠাতেও অনেকেও অনাগ্রহী?
একজন শিশুর প্রথম ও প্রধান শিক্ষক তার মা। নেপোলিয়ানের সেই উক্তি ‘ আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিবো’ কারো অজানা নয়। মা যদি তার শিক্ষা আর কর্ম দিয়ে তার যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পারে তবে তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মঙ্গল জনক। আমরা যদি কর্মক্ষেত্র গুলো নারী বান্ধব করতে পারি তাহলে তো তাদের কাজ করতে তো কোন সমস্যা নেই বরং অনেক সম্ভাবনা তৈরী করতে পারে। অনেকের হয়ত নারীর কর্ম নিয়ে আপত্তি থাকতে পারে কিন্তু সেখানে যদি দীর্ঘমেয়াদি সুফল লাভ করা যায় তবে তারা কেন কর্ম ক্ষেত্রে যাবে না?
এপিএসনিউজ: পেশাগত জীবন ও দাম্পত্য জীবন কি আলাদা?
কথায় আছে ‘অভাব যখন ঘরে ঢোকে ভালোবাসা তখন দরজা দিয়ে পালায়।’ পেশাজীবন সাংসারিক জীবনেরই একটি অংশ। কারো যদি আয়ের বৈধ উৎস না থাকে তাহলে তার থেকে ভালো কিছু কি আশা করা যায় না। প্রত্যেক পেশাই কাজ আর কাজই মানুষকে মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। পেশাগত জীবনকে দাম্পত্য জীবনের জন্য বিরোধ না ভেবে যদি তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ধরা হয় তাহলে পরিবারের প্রতিও কর্তব্য পালন করা সহজ হয়। দাম্পত্য ও পেশাজীবন বিরোধ নিয়ে সাংসারিক ঝামেলা হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
এপিএসনিউজ: আইনের শাসন কথাটা কি সাংসারিক জীবনের সাথে যায়?
পারস্পারিক বোঝাপড়া খুবই জরুরী। নিয়মের ভেতর থেকেই সবাইকে সংসার ধর্ম পালন করতে হয়। মতামত, চিন্তা ও সিদ্ধান্ত যখন কারো উপর চাপিয়ে দেওয়া না হয় তখন তার গুরুত্ব বেড়ে যায়। জীবনের প্রয়োজনেই আইন ও আইনের শাসন আর এর চর্চা যদি পরিবারে থাকে তবে তা নির্মল সুখের উৎস হতে পারে।
এপিএসনিউজ: বাংলাদেশে যে দাম্পত্য কলহ বা বিবাহ বিচ্ছেদ তার কারন হিসেবে আপনি কি কি মনে করেন?
একজন অরেকজনের থেকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে গেলে কারো কথা, মতামত , সুবিধা বা অসুবিধার প্রতি কোন গুরুত্ব থাকে না। একজনের কতৃত্বে যখন সম্পর্ক চালানো হয় তখন তাতে ভাঙ্গন আসা স্বাভাবিক আর এতে যদি ভাঙ্গন না আসে তবুও ভাঙ্গনের পরিবেশ তৈরী হয়। এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, চারিত্রিক স্বচ্ছতা ও উদার মন মানসিকতার গুরুত্বকেও অস্বিকার করতে পারি না।
এপিএসনিউজ: আপনি ৩ সন্তানের বাবা। আপনার সন্তানদের নিয়ে কি চিন্তা করেন?
বাংলাদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে আমার বেড়ে উঠা। তারাও এই শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠছে। তারা এখন যে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে বা তাদের প্রজন্মের যে ভাবনা তা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের সময় থেকে আলাদা। তবুও বাংলাদেশ ও বাংঙ্গালী সংস্কৃতি তারা ধারন করে বেড়ে উঠছে। আমার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমি আশা করি তারা নিজের প্রতিভার ও সদগুণাবলির সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটাতে পারবে। তারা ইতিবাবচক চিন্তা ও কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীন। তারা তাদের কর্ম ও শিক্ষার দ্বারা নিজ যোগ্যতার পরিচয় রাখবে এটাই আমার প্রত্যাশা।
এপিএসনিউজ: দাম্পত্য জীবনের একযুগ পার করছেন । আপনার কাছে বিষয়টি কেমন লাগছে?
যে মানুষটা দিন মজুর তারও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আছে। কোন কোন কাজ ও ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক অভাব দূর হয়। কিন্তু সাংসরিক শান্তি ও অমায়িক সম্পর্কই পারে জীবনকে জীবনের মত রাখতে। এটি জীবনের বড় অর্জন। পরিবার প্রথা নিয়ে যখন নানা কথা উঠছে তখন আমি আমাদের সম্পর্ক নিয়ে গর্ব করতে পারি। সুখ ও সমৃদ্ধির পরিবার দেশের জন্য শৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধি আনে।
এপিএসনিউজ: নতুন যারা দাম্পত্য জীবন শুরু করেছেন বা যারা আছেন তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
দাম্পত্য জীবন একই সাথে ভালোবাসার ও দ্বায়িত্ব পালনের। দ্বায়িত্ব পালন না করে শুধু ভালোবাসা প্রত্যাশা করা বা শুধু ভালোবাসতে গিয়ে কোন দ্বায়িত্ব পালন না করলে সম্পর্ক স্থায়ী হওয়া কঠিন আর স্থায়ী হলেও তা যেমন হওয়া উচিত তা হয়ত হবে না। নিজের প্রাধান্য ছাড় দিয়ে সহনশীল ও মানবিক হতে না পারলে সংসার জীবন বিষিয়ে উঠতে পারে।