মাজহারুল ইসলাম
১। মৃত্যু অবধারিতঃ – ইহা কারণে বা অকারণে ঘটতে পারে—
– হে নবী ওদের বলুন, যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালাতে চাচ্ছ, তোমাদেরকে সে মৃত্যুর মুখোমুখি হতেই হবে। … (সূরা জুমুআহ ৮)
– প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।… (সূরা আম্বিয়া ৩৫)
– হে নবী! তোমার পূর্বেও আমি কোন মানুষকে অমরত্ব দান করিনি। সুতরাং তোমারও মৃত্যু হলে ওরা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে?’ (সূরা আম্বিয়া ৩৪)
– অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরান্বিত করতে পারবে না। ( সূরা নাহল ৬১)
– … কেউই জানে না আগামীকাল তার জন্যে কী অপেক্ষা করছে এবং কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু হবে। শুধু আল্লাহই সর্বজ্ঞ, সব বিষয়ে অবহিত।’ (সূরা লোকমান ৩৪)
– প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই একেকটি ওয়াদা (নির্দিষ্ট সময়) রয়েছে, যখন তাদের সে ওয়াদা (নির্দিষ্ট সময়) এসে পৌঁছে যাবে, তখন না একদন্ড পেছনে সরতে পারবে, না সামনে ফসকাতে পারবে। (সূরা ইউনুস ৪৯)
– আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারে না; সেজন্য একটা (মৃত্যুর) সময় নির্ধারিত রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান ১৪৫)
– হে মানুষ! আমিই জীবন দান করি। আমিই মৃত্যু ঘটাই। আমার কাছেই সবাইকে ফিরে আসতে হবে। …(সূরা ক্বাফ ৪৩-৪৪)
– আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেছেন, তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন…। (সূরা হজ ৬৬)
– আমি তোমাদের মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি। (সূরা ওয়াকিয়া ৬০)
২। ঘুম এক প্রকার মৃত্যুঃ
আল্লাহ মৃত্যু এলে বা ঘুমের সময় আত্মাকে তুলে নেন। তারপর যার মৃত্যু অবধারিত তার আত্মা রেখে দেন। আর অন্যদের আত্মা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ফিরিয়ে দেন। সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগকারীদের জন্যে এর মধ্যে শিক্ষণীয় নিদর্শন রয়েছে!’ (সূরা জুমার ৪২)
৩। আমরা এই অবধারিত মৃত্যুকে ভয় পাই আমদের “পাপের কারণে”
– কস্মিনকালেও তারা মৃত্যু কামনা করবে না ঐসব গোনাহর কারণে, যা তাদের হাত পাঠিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ গোনাহগারদের সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন। আপনি তাদেরকে জীবনের প্রতি সবার চাইতে লোভী দেখবেন। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে, যেন হাজার বছর আয়ু পায়। অথচ এরূপ আয়ু প্রাপ্তি তাদেরকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ দেখেন যা কিছু তারা করে। (সূরা বাক্বারাহ ৯৫-৯৬)
৪। “দুনিয়ার মোহ আর মৃত্যুকে অপছন্দ” করা মুমিনের কাজ নয়—
– সাওবান (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ বলেছেন, খাদ্য গ্রহণকারীরা যেভাবে খাবারের পাত্রের দিকে একত্রিত হয় অচিরেই বিজাতিরা তোমাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই একত্রিত হবে৷ এক ব্যক্তি বলল, সেদিন আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণ কি এরূপ হবে? তিনি বললেনঃ তোমরা বরং সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে; কিন্তু তোমরা হবে প্লাবনের স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের পক্ষ থেকে ভয় দূর করে দিবেন, তিনি তোমাদের অন্তরে “আল-ওয়াহন ভরে দিবেন।এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! ‘আল-ওয়াহন’ কি? তিনি বললেনঃ দুনিয়ার মোহ এবং “মৃত্যুকে অপছন্দ করা”। (আবু দাউদঃ-৪২৯৭)
৫। মৃত্যু যখন হয়ঃ
– মানুষের প্রাণ যখন তার কন্ঠনালী পর্যন্ত এসে যাবে এবং তাকে বলা হবে, (এ বিপদের সময়) কে ঝাড় ফুঁক করবে? সে (তখন ঠিকমতই) বুঝে নেবে যে, (পৃথিবী থেকে ) বিদায়ের ক্ষণ এসে গেছে। (আর এভাবেই) তার (এজীবনের শেষ) পা (পরের জীবনের প্রথম) পা’র সাথে জড়িয়ে যাবে। আর সেদিনটিই হবে তোমার পালনকর্তার দিকে তার (অনন্ত) যাত্রার (প্রথম) সময়। (সূরা ক্বিয়ামাহ ২৬-৩০)
– অতঃপর যখন কোন মানুষের প্রাণ তার কন্ঠনালীতে এসে পৌঁছে যায়, তখন তোমরা (কেন অসহায়ের মত) তাকিয়ে থাকো, তখন আমি তোমাদের অপেক্ষা তার অধিক নিকটে থাকি; কিন্তু তোমরা দেখ না। তোমরা যদি এমন অক্ষম নাই হও আর (তোমাদের ক্ষমতার দাবীতে) সত্যবাদী হও, তাহলে কেন সে (বেরিয়ে যাওয়া) প্রাণকে (পুনরায় তার দেহে) ফিরিয়ে আনো না! (সূরা ওয়াক্বিয়াহ ৮৩-৮৭).
সংকলনেঃ মাজহারুল ইসলাম, আইনজীবী ও ইসলামী চিন্তাবিদ