সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন শাখায় অনিয়ম-দুর্নীতি নির্মূলে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এরই মধ্যে অনিয়ম ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত চারজনকে বরখাস্ত করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এছাড়া একজনের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) স্থগিত করা হয়েছে এক বছরের জন্য এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। অনিয়ম-দুর্নীতির প্রশ্নে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এমন কঠোর অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিচারাঙ্গনের সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে যে অনিয়ম-দুর্নীতি চলে আসছে সেটা চিরতরে বাতিলে যেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকে।
অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মামলা দায়ের থেকে আদেশের অনুলিপি পেতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতির শিকার হতে হচ্ছিল বলে অভিযোগ মেলে প্রতিনিয়ত। জালিয়াতির মাধ্যমে জামিন, উৎকোচের মাধ্যমে মামলার সিরিয়াল দেয়াসহ বিভিন্নভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছেন সেকশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৮ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়। ভার্চুয়াল ওই বৈঠকে আপিল বিভাগের সব বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অংশ নেন।
বৈঠকে আইনজীবী সমিতির নেতারা সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতির কাছে। তারা বলেন, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশের লোভের কারণে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের হতাশা বেড়েই চলেছে। বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে দুর্নীতির এই ভয়াল গ্রাস থেকে বিচারপ্রার্থী জনগণকে বাঁচাতে আপনাকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতেই হবে।
সে আলোকে প্রধান বিচারপতি ঢালাও অভিযোগ না করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিতে বলেন আইনজীবী সমিতির নেতাদের। তিনি বলেন, দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। হাইকোর্টের এফিডেভিট শাখায় অভিযানে নানা অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৬ আগস্ট হাইকোর্টের এফিডেভিট শাখায় অভিযান চালায় সর্বোচ্চ আদালত প্রশাসন। এতে নেতৃত্ব দেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা, শাখায় নানা অনিয়মের অভিযোগে সেদিন পুলিশ ৪৩ জনকে আটক করে। পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বরখাস্ত চারজন অসদাচরণের অভিযোগে গত ১৬ আগস্ট মোরশেদুল হাসান নামে এক বেঞ্চ অফিসারকে বরখাস্ত করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এরপর ২০ আগস্ট অসদাচরণ, দুর্নীতি ও অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের গুরুতর অভিযোগে হাইকোর্ট বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রশাসন। এরা হলেন- প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুর রশিদ ও মো. সেরাজুল ইসলাম। এ দুজন এফিডেভিট কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে ২৭ জুলাই অসদাচরণের অভিযোগে আনোয়ার সাদাত নামে এক এমএলএসএসকে (অফিস সহায়ক) চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
সুপারিনটেনডেন্ট রেজাউলের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট স্থগিত গত ১৭ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) এক বছরের জন্য স্থগিত করে প্রশাসন।এ বিষয়ে জারি হওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট মো. রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভাগীয় মামলায় আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় হাইকোর্ট বিভাগ কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৩ এর ৪ (১) বিধি অনুসারে তার বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) এক বছরের জন্য স্থগিত করে বিভাগীয় মামলাটি নিষ্পত্তি করা হলো।সফটওয়্যার কোম্পানির স্টিকার দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমলে আইনজীবীদের দাবির মুখে গত জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্ট সীমিত আকারে খোলা হয়। তারপর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বারান্দায় বসে স্টিকার বিক্রির নামে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে একটি সফটওয়্যার কোম্পানির বিরুদ্ধে। একই সিরিয়ালের স্টিকার একাধিক আইনজীবীর কাছে বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তোলা হয় ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইজ নামে ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে।