—আলহাজ্ব আব্দুম মুনিব
১০ মহরম ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদাপূর্ন দিন। আমাদের মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহ তাআলা বছরের যে কয়েকটি দিনকে বিশেষ মর্যাদায় ভুষিত করেছেন,তার মধ্যে আশুরা বা মহররমের ১০ তারিখ অন্যতম। ঐতিহাসিক ও ঘটনাবহুল এই দিনটিকে বলা হয় পৃথিবীর আদি-অন্তের দিন। অর্থাৎ এ দিনেই পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে, আবার ধ্বংস বা কিয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে। যে সব ঘটনার কারণে আশুরা তাৎপর্যময় এবং মুসলমানদের ইতিহাসে শোকের পাশাপাশি সুখের নিদর্শন হয়ে আছে সেগুলো সংক্ষেপে হল-
১. আশুরার দিনে আল্লাহ তাআলা পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। আবার এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
২. আশুরার দিনে হজরত আদম (আ.) বেহেশত থেকে দুনিয়ায় নেমে এসেছিলেন। আবার এ দিনেই আল্লাহ পাক আদম (আ.)-এর দোয়া কবুল করেছেন এবং এ দিনে তিনি স্ত্রী হাওয়া (আ.)-এর সঙ্গে আরাফার ময়দানে সাক্ষাৎ করেছেন।
৩. হজরত নুহ (আ.)-এর জাতির মানুষজন আল্লাহর গজব মহাপ্লাবনে নিপতিত হওয়ার পর আশুরার দিনে নৌকা থেকে ঈমানদারদের নিয়ে দুনিয়ায় অবতরণ করেছেন।
৪. হজরত ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ৪০ দিন পর আশুরার দিনে সেখান থেকে মুক্তি লাভ করেছেন।
৫. হজরত আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর কঠিন রোগ ভোগ করার পর আশুরার দিনে আল্লাহর রহমতে সুস্থতা লাভ করেছেন।
৬. হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.) তার ১১ ভাইয়ের ষড়যন্ত্রে কুপে পতিত হয়েছিলেন এবং এক বণিক দলের সহায়তায় মিসরে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তারপর আল্লাহর বিশেষ কুদরতে তিনি মিসরের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ৪০ বছর পর আশুরার দিনে পিতার সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন।
৭. হজরত ইউনুস (আ.) জাতির লোকদের প্রতি হতাশ হয়ে নদী অতিক্রম করে দেশান্তরিত হওয়ার সময় নদীর পানিতে পতিত হয়েছিলেন এবং মাছ তাকে গিলে ফেলে। মাছের পেট থেকে তিনি আল্রাহর রহমতে ৪০ দিন পর মুক্তি পেয়েছিলেন আশুরার দিনে। ৮. হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের অত্যাচারের কারণে তার দলবলসহ অন্যত্র চলে যান। পথে নীল নদ পার হয়ে তিনি ফেরাউনের হাত থেকে আশুরার দিন মুক্তি পান। আর ফেরাউন তার দলবলসহ নীল নদের পানিতে ডুবে মারা যায়।
৯. হজরত ঈসা (আ.)-এর জাতির লোকেরা তাকে হত্যা করার চেষ্টা করলে আশুরার দিনে আল্লাহ তাআলা তাকে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে মুক্তি দান করেছিলেন।
১০. আশুরার দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবীর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শাহাদত বরণ করেছিলেন।
একটি বিষয় বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে আশুরার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আল্লাহ পাকের নিকট আমি আশাবাদী যে তিনি এক বছর আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসনাদে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.)
আলহাজ্ব আব্দুম মুনিব
মাস্টার্স, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
এবং কামিল (অধ্যায়নরত)
আল হাদিস বিভাগ।