সব
facebook apsnews24.com
আশুরার দুই রোজার প্রেক্ষাপট - APSNews24.Com

আশুরার দুই রোজার প্রেক্ষাপট

আশুরার দুই রোজার প্রেক্ষাপট

আরবি শাহরুন শব্দের অর্থ মাস, আর মুহাররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। সুতরাং শাহরুল মুহাররম-এর যৌগিক অর্থ হলো সম্মানিত মাস। আরবি মুহাররম থেকেই ‘মহররম’ শব্দটি বাংলা সাহিত্যে ও বাংলাভাষী মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়েছে।

মহররম হিজরি সনের প্রথম মাস। এটি আল্লাহতায়ালার কাছে সম্মানিত চার মাসের এক মাস। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা ১২, যেদিন থেকে তিনি সব আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোর সম্মান বিনষ্ট করে নিজেদের প্রতি অত্যাচার কোরো না।’ (সুরা তাওবা : ৩৬)

এ মাসের দশ তারিখকে বলা হয় আশুরা। কারণ, আরবি ‘আশারা’ থেকে এর উৎকলন, যার অর্থ হচ্ছে দশ। তাই এ মাসের দশ তারিখকে পবিত্র আশুরা বলে অভিহিত করা হয়। আদিকাল থেকেই যুগে যুগে আশুরার এই দিবসে বহু স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা আমরা পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফ থেকে জানতে পাই।

ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে এ আশুরায়। এই যেমন আদি পিতা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয় এ দিনে, এ দিনেই আদম (আ.)-কে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় আবার ভুলের কারণে তাদের পৃথিবীতে প্রেরণের পর এ দিনই তার তওবা কবুল করা হয়। এমনিভাবে এ দিনে জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) জন্মগ্রহণ করেন, আবার এদিনেই নমরুদের বিশাল অগ্নিকু- থেকে মুক্তিলাভ করেন। এই আশুরাতেই তুর পাহাড়ে আল্লাহর সঙ্গে মুসা (আ.) কথোপকথন ও আসমানি কিতাব ‘তাওরাত’ লাভ করেন। আবার এই ১০ মহররমেই জালেম ফেরাউনের দলবলসহ নীল দরিয়ায় সলিল সমাধি হয়। তদ্রƒপ, হযরত নুহ (আ.) ও তার সঙ্গী-সাথীদের মহাপ্লাবন থেকে মুক্তিলাভ, মাছের পেট থেকে হযরত ইউনুস (আ.)-এর পরিত্রাণ, আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণের সূচনা এ সব কিছুই সংঘটিত হয়েছে ১০ মহররম বা আশুরার দিনে। মোট কথা, আশুরার দিন ইতিহাসের এক জ্বলন্ত সাক্ষী। তাই শরিয়তের দৃষ্টিতে এ দিনটির রয়েছে অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য। মহররম মাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস শরিফে বহু বর্ণনা এসেছে। আর এসব ফজিলতের আলোকে মুসলিম উম্মাহর জন্য এ মাসের সুনির্দিষ্ট আমল হলো ‘আশুরার সিয়াম।’

আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেন, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে কি, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসুল (সা.)-এর কাছেও জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার কাছে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখো। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহতায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১১৫৭)

মহররম মাসের রোজা সম্পর্কিত হাদিস থেকে জানা যায়, রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজাই উম্মতে মুহাম্মদির ওপর ফরজ ছিল। পরবর্তী সময়ে ওই বিধান রহিত হয়ে তা নফলে পরিণত হয়। হাদিসটি হলো, ‘রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা আল্লাহর মাস মহররমের আশুরার রোজা।’ (সুনানে কুবরা : ৪২১০)

জাবের (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত আছে, ‘রাসুল (সা.) আমাদের আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। এ বিষয়ে নিয়মিত তিনি আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না এবং নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১২৮)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, মহানবী (সা.) যখন হিজরত করে মদিনায় পৌঁছেন, তখন তিনি দেখলেন যে মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, আশুরার দিনে তোমরা রোজা রেখেছ কেন? তারা উত্তর দিল, এই দিনটি অনেক বড়। এই পবিত্র দিনে মহান আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন আর ফেরাউন ও তার বাহিনীকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুসা (আ.) রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। তাদের উত্তর শুনে নবী করিম (সা.) বললেন, মুসা (আ.) এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনি নিজে আশুরার রোজা রাখেন এবং উম্মতকে তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩৯৭; মুসলিম, হাদিস : ১১৩৯)

মুসলিম শরিফের এক হাদিসে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহুদি-খ্রিস্টানরাও তো এই দিনটিকে সম্মানজনক দিন মনে করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি, তাহলে তো তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। তাদের প্রশ্নের উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, ‘তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে, আগামী বছর ইনশাআল্লাহ আমরা এই ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব। (মুসলিম, হাদিস : ১১৩৪)

ইমাম শাফেয়ি ও তার শিষ্যরা এবং ইমাম আহমাদ ও ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজাই মুস্তাহাব। কেননা রাসুল (সা.) দশ তারিখ রোজা রেখেছেন এবং নয় তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছেন।

আবু কাতাদা (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)

আপনার মতামত লিখুন :

লোক দেখানো ইবাদত মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না

লোক দেখানো ইবাদত মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না

রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি

রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি

হিজরি নববর্ষ বয়ে আনুক করোনামুক্ত পৃথিবীর নতুন পয়গাম : বাংলাদেশ ন্যাপ

হিজরি নববর্ষ বয়ে আনুক করোনামুক্ত পৃথিবীর নতুন পয়গাম : বাংলাদেশ ন্যাপ

বাংলাদেশ থেকে এবারও হজে যেতে পারবেন না কেউ

বাংলাদেশ থেকে এবারও হজে যেতে পারবেন না কেউ

বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত

বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত

৫৬০ মডেল মসজিদের মধ্যে অর্ধশত উদ্বোধন আজ

৫৬০ মডেল মসজিদের মধ্যে অর্ধশত উদ্বোধন আজ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj