এডভোকেট ফয়জুল্লাহ ফয়েজবাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো তদন্ত, কোন অপরাধ সংঘটিত হলে প্রথমেই তদন্ত করে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত করতে পারলেই চার্জ শিট দেয়া হয় এবং সেই চার্জ শিট ফলো করেই চার্জ গঠন করা হয়। অতঃপর সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়ে যদি গঠিত চার্জ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায় তবে ই আসামির সাজা হয়, অন্যথায় খালাস।
বাংলাদেশের বর্তমান বিচারব্যবস্থায় কোন অপরাধ সংঘটিত হলে তদন্ত করার জন্য যে কয়টি সংস্থা আছে তা হলো ১. পুলিশ (থানায় চাকুরীরত যে কোন সাব-ইনস্পেক্টর বা তার উপরের পদের কর্মকর্তা ই তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে থাকেন), ২. Crime Investigation Department (CID) ৩. Police Bureau of Investigation (PBI), ৪. Detection Branch (DB), এই তিনটি সংস্থা ই পুলিশের বিশেষ শাখা, পুলিশ সদস্যদের থেকে ই এখানে পদায়ন করা হয়, আরেকটা তদন্ত সংস্থা হিসেবে কাজ করছে Rapid Action Battalion (RAB) , এটি আবার একটু ভিন্ন আঙ্গিকে পুলিশ, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের কে একসাথে নিয়ে পুলিশের একটি বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে গঠন করা হয়েছে।এসব তদন্ত সংস্থার বাইরে জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি নামে একটি বিষয় রয়েছে যেখানে একজন প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করেন। তবে সেটা খুব কম ক্ষেত্রেই হয়, জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি করার জন্য জুডিশিয়াল অফিসারদের পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট এবং প্রশিক্ষণ কিছু ই নেই।
যেকোনো অপরাধ সংঘটিত হলে এসব তদন্তকারী সংস্থার উপর দায়িত্ব বর্তায় সৎ উদঘাটনের, সাক্ষ্য ও প্রমাণ সংগ্রহের, কিন্তু সাক্ষ্য আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণার অভাব, জুডিশিয়াল মাইন্ড না থাকা, আইন সম্পর্কে স্বল্প ধারণা এবং অস্ত্রের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে থাকার কারণে এই তদন্ত সংস্থা প্রায় ই সঠিক তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়, অনেক সময় তদন্ত করতে গিয়ে অপরাধের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নষ্ট করে ফেলে, গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের কে আসামি বানিয়ে ফেলে, ফলে বিচারের সময় আর অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায় না, ন্যায় বিচার ও হয় না।বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার পরে দেখা গেছে ক্রাইম সিনে পুলিশ খালি হাতে অর্থাৎ গ্লাভস না পরে, এভিডেন্স ব্যাগ না নিয়ে সবকিছু নেড়েচেড়ে দেখতে, এতে গুরুত্বপূর্ণ ফরেনসিক এভিডেন্স কিন্তু নষ্ট হয়ে যেতে পারে।বর্তমানের বহুল আলোচিত মেজর সিনহা মার্ডার কেসের তদন্তের দায়িত্ব পরেছে র ্যাবের উপর, এখানে পুলিশ নিজে আসামি তাই পুলিশের অন্যান্য সংস্থার উপর আস্থা রাখা যায়নি আবার র ্যাবের মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য যদি তদন্ত করে তবে সেনাবাহিনী নিজে যেহেতু ভিক্টিম সেখানে ও আসামিদের আস্হা কতটুকু আসবে তা প্রশ্নবিদ্ধ।
এরকম আস্থাহীনতা এড়াতে এবং আইন ও সাক্ষ্য বিষয়ে অভিজ্ঞ এরকম নিরপেক্ষ একটি তদন্ত সংস্থা হতে পারে জুডিশিয়াল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (JIA), যদি অধিক সংখ্যক জুডিশিয়াল অফিসার নিয়োগ করে সেই অফিসারদের মধ্য থেকে একটা অংশকে সুন্দরভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে এরকম একটি তদন্ত সংস্থা গঠন করে এবং সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধানে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পায়, তবে তদন্তের শুধু মান ই বৃদ্ধি পাবে না, তদন্ত নিরপেক্ষ এবং সঠিকভাবে হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
উচ্চদালতের তত্বাবধানে নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থার সবচেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো Federal Investigation Bureau (FBI) , যেটা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কার্যকরী তদন্ত সংস্থা, এমনকি সারা বিশ্বে FBI এর নাম ছড়িয়ে পরেছে তাদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের কারনে।তাই মাননীয় আইনমন্ত্রী, মাননীয় প্রধান বিচারপতি এবং আইন কমিশনের প্রতি আমার আহ্বান অতি দ্রুত ই যেন Judicial Investigation Agency (JIA) গঠন করা হয় এবং পুলিশের দৌরাত্ম থেকে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে মুক্তি দেয়া হয়।আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট