এজি লাভলু, কুড়িগ্রাম: পানির অপর নাম জীবন হলেও বানের পানিতে দীর্ঘদিন ভাসমান মানুষের জীবনে প্রবাদটি বেমানান। বসতবাড়ী সহ বিস্তৃত এলাকায় থইথই পানিতে বাতাসের ধাক্কায় উত্তাল ঢেউ যেন প্রতিনিয়ত বানভাসিদের ডুকরে উঠা বোবাকান্না। বেঁচে থাকার যুদ্ধে ও দুর্দশার নিকষকালো মেঘে ছেয়ে আছে তাদের জীবনের আকাশ। এরই ফাঁক গলিয়ে একচিলতে আলোই যেন তাদের জীবনে ঈদের আনন্দ।
সঞ্চয় সবই ভেসে গেছে পানিতে, রয়েছে শুধুই স্বপ্ন। বানভাসিদের কাছে এই মূহুর্তে ঈদের আনন্দ অনেকটাই রঙের মত। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় থমকে গেছে বানভাসিদের জীবন-জীবিকা। ঈদের দিন পেটভরে খাবে একবেলা নেই সে নিশ্চয়তা। আর কোরবাণী দেয়া তো তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। কয়েক দফা বন্যা ও চলমান নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব এই মানুষগুলোর ঈদ আনন্দ তাদের কাছে অধরা।
একদিকে করোনা অন্যদিকে বন্যা এমন সংকটে ঈদ তাদের মনে রং ছড়ায় না। কুড়িগ্রামের ৪ শতাধিক চরের পানি বন্দী মানুষগুলোর অধিকাংশেরই ক্রয়ক্ষমতা নেই সেমাই ও মাংস কেনার। নতুন জামাকাপড় কেনা তো দুরের কথা একটু করে মাংস খাওয়া তাদের কাছে স্বপ্নিল স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। নিদারুণ কষ্টে থাকা বানভাসি মানুষগুলো পরিবার নিয়ে যখন হতাশায় নিমজ্জিত, মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ফাঁক গলিয়ে হতাশাগ্রস্ত মানুষের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন সমাজের আলো ছড়ানো কিছু আলোকিত বিত্তবান মানুষ। এবার দুর্গম চরাঞ্চলের কিছু মানুষের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসে প্রশাসন।
জেলা পুলিশসুপারের উদ্যোগে যাত্রাপুরের দূর্গম আলোর চরে ২টি গরু, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিমের উদ্যোগে কদমতলা চরে ১টি গরু এবং রসুলপুরে ডা: শাহানাজ বেগম নাজুর উদ্যোগে ১টি গরু ঈদের পরদিন খেয়ার আলগাচরে ২টি সহ মোট ৬টি গরু কোরবাণী দিয়ে সহস্রাধিক পরিবারে মাংস বিতরণ করে একটু করে মাংস খাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেন এই আলো ছড়ানো মানুষগুলো।
উল্লেখ্য, গত বছর বন্যায় ঈদুল আযহায় কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খ.ম আতাউর রহমান বিপ্লবের ফেসবুক পেজে লেখা স্ট্যাটাস, “নতুন জামা-কাপড় তো দুরের কথা, এক টুকরো মাংস জুটবে না বানভাসিদের ভাগ্যে” এই আবেগঘন স্ট্যাটাসটি ওই সময় সদ্য যোগদানকৃত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম এর নজরে আসলে কমেন্টস এ চরবাসীদের গরু কোরবাণী করে মাংস খাওয়ার ঘোষণা দেন। সেসময় দুটো গরু কোরবানি দিয়ে চরাঞ্চলের বানভাসিদের মাঝে মাংস বিতরণ করেন তিনি। এছাড়াও বন্যা, খড়া, করোনা, শীত, অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা সহ অবহেলিত মানুষগুলোকে সহায়তা ও সহযোগিতা করে ইতিমধ্যে জেলাবাসীর কাছে নিজেকে মানবিক ও আলোকিত মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদান করার পর থেকে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন অবিরাম।
এরই ধারাবাহিকতায় করোনার পর বন্যায় এবারো তিনি ২টি গরু কোরবাণী করেন এবং বিত্তবানদের বিবেককে তাড়িত করে তাদের উৎসাহিত করেন।
হতাশায় নিমজ্জিত চরাঞ্চলের এসব মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বিপিএ, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খ.ম আতাউর রহমান বিপ্লব ঈদের দিন ঘুরে ঘুরে দিনব্যাপী চরবাসীদের মাঝে মাংস বিতরণ করেন। এছাড়াও রসুলপুর চরের আলোর পাঠশালা প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপণ করেন পুলিশ সুপার।
সফরসঙ্গী ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক, দক্ষ মানবসেবক মতলুবুর রহমান সফি খান, কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাফুজার রহমান ও দেশ রুপান্তর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার তামজিদ আহমেদ তুরাগ প্রমূখ।