সব
facebook apsnews24.com
করোনায় ধরাশায়ী মধ্যবিত্তের জীবন - APSNews24.Com

করোনায় ধরাশায়ী মধ্যবিত্তের জীবন

করোনায় ধরাশায়ী মধ্যবিত্তের জীবন

তালহা জাহিদঃ বিশ্বব্যাংক আর গবেষকরা মধ্যবিত্তের একটা চেহারা দাঁড় করিয়েছে আয় অথবা ক্রয় ক্ষমতা দিয়ে। কিন্তু করোনায় রাজধানী ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত চেনা যাচ্ছে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়ার দৃশ্যে।মধ্যবিত্ত ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে পারেন না। অভাবের কথা মুখ ফুটে বলতেও পারেন না। মধ্যবিত্তের অবস্থান মাঝখানে। তাই না পারে নিচে নামতে, না পারে ওপরে উঠতে। এই করোনাকালে তাই হাঁসফাঁস করছে মধ্যবিত্ত।

এখন আমরা যাদের দেখছি, তারা সংজ্ঞায়িত হয়েছে মধ্যবিত্তের প্রথম টায়ার হিসেবে। তবে করোনা যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে আরো পরের টায়ারেও আঁচ লাগবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।কারা মধ্যবিত্ত? উঃ- বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা জরিপ অনুযায়ী করোনার আগে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২০.৫ ভাগ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। আর চরম দরিদ্র ছিল ১০ ভাগ। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, একজনের দৈনিক আয় এক ডলার ৯০ সেন্ট হলে ওই ব্যক্তিকে দরিদ্র ধরা হয় না। এর নিচে হলে দরিদ্র।এখন মধ্যবিত্তের আয়সীমা কত? উঃ- এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলছে, এক ব্যক্তির ক্রয় ক্ষমতা (পিপিপি) যদি প্রতিদিন দুই মার্কিন ডলার থেকে ২০ মার্কিন ডলারের মধ্যে হয় তবে তাকে মধ্যবিত্ত বলা যায়। এই হিসেবে তারা বলছে, বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত হলো তিন কোটি সাত লাখ। বিশ্বব্যাংকের মধ্যবিত্তের আয়ের হিসেবটি একটু বেশি। যাদের প্রতিদিন আয় ১০ থেকে ৫০ ডলার, তারা মধ্যবিত্ত।

তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুই থেকে চার ডলার প্রতিদিনের আয় হলেই মধ্যবিত্ত। সেই হিসেবে যার মাসিক আয় ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা সেই মধ্যবিত্ত। এটি বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ ভাগ। ১৬ কোটি মানুষের হিসেবে সংখ্যাটি দাঁড়ায় চার কোটি ৮০ লাখ।

বিআইডিএস-এর সাম্প্রতিক জরিপে বলা হচ্ছে, করোনায় এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। তাই এখন দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা পাঁচ কোটির বেশি।মধ্যবিত্ত কি দরিদ্র হচ্ছে? উঃ- এই যে দেড় কোটি লোক নতুন করে দরিদ্র হলেন, তারা কি মধ্যবিত্ত ছিলেন? চট করে এর জবাব দেওয়া কঠিন। দারিদ্র্যসীমার একটু ওপরে একটি বড় জনগোষ্ঠী আছে। তারা যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে দরিদ্র হয়ে যান। আবার পরে পরিস্থিতি কটিয়ে ওঠেন।

ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কে এ এম মোরশেদ বলেন, ‘দিনে ১.৯ ডলারের দ্বিগুণ যাদের আয় তাদের আমরা বলি নিম্ন মধ্যবিত্ত। এরাই এখন সবচেয়ে বেশি সংকটের মুখে। তারাই হয়তো দরিদ্রের কাতারে নেমে গেছেন। কিন্তু যারা মধ্যবিত্ত, তারা এখনো টিকে আছেন। তাদের সংখ্যা হয়তো ঠিকই থাকবে। হয়তো ব্যক্তির পরিবর্তন হবে। কারণ, নতুন পরিস্থিতিতে পেশার পরিবর্তন হবে। নতুন ধরনের ব্যবসা আসবে, কাজ আসবে। কেউ ভালো অবস্থায় যাবেন। আবার কেউ খারাপ অবস্থায় পড়বেন।

‘বিআইডিএস-এর জরিপ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর জরিপে দেখা গেছে, করোনায় ফর্মাল সেক্টরে কাজ করা ১৩ শতাংশ মানুষ চাকরি হরিয়েছেন। যাদের আয় ১১ হাজার টাকার কম, তাদের ৫৬.৮৯ শতাংশ পরিবারের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, ৩২.১২ শতাংশের আয় কমে গেছে। যাদের আয় ১৫ হাজার টাকার মধ্যে তাদের ২৩.২ শতাংশের আয় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ৪৭.২৬ শতাংশের আয় কমে গেছে। আর যাদের আয় ৩০ হাজার টাকার বেশি তাদের ৩৯.৪ শতাংশের কমেছে এবং ৬.৪৬ শতাংশের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এই জরিপে কিন্তু মধ্যবিত্তের ওপর করোনার অভিঘাত স্পষ্ট।৩০ ভাগ মধ্যবিত্ত হওয়ার প্রত্যাশা কি পূরণ হবে? উঃ- ২০১৫ সালে বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন তাঁর এক গবেষণায় দেশের তিন কোটি ৫০ লাখ মানুষকে মধ্যবিত্ত বলেন। যারা দিনে দুই থেকে তিন ডলার আয় (পিপিপি) করেন তাদের তিনি মধ্যবিত্তের মধ্যে ফেলেন। আর তখন সংখ্যাটি ছিল মোট জনগোষ্ঠীর ২০ ভাগ। তিনি তখন ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ শতাংশ মধ্যবিত্ত হবে বলে আশা করেন।ড. বিনায়ক তাঁর গবেষণায় বলেন, বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের ৪৮.৪ শতাংশ বেসরকারি চাকরি করেন। ২০ শতাংশের বেশি সরকারি চাকরি করেন। প্রায় ২২ শতাংশ ব্যবসা করেন। নিম্ন মধ্যবিত্তের মধ্যে ৫১.৬ শতাংশ বেসরকারি চাকরি করেন। আর ব্যবসায় যুক্ত ১৭ শতাংশ। মধ্যবিত্ত ফ্ল্যাটে থাকে কিংবা জমির মালিক। টাকা-পয়সা রাখে ব্যাংক হিসাবে। ২৩.৪৯ শতাংশ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করে।

বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদের মতে, ১৫-২০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যরেখার খুব কাছে অবস্থান করে। সেই সংখ্যাটিও তিন কোটির মতো। যেকোনো দুর্যোগ এলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিবিএস-এর খানা জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের নিচের দিক থেকে প্রথম ৫০ ভাগ মানুষের হাতে মোট আয়ের ২০ ভাগ। শীর্ষ ১০ ভাগের হাতে মোট আয়ের ২৮ ভাগ। এর মানে হলো, মাত্র ১০ ভাগ মানুষের হাতে ৫০ ভাগ মানুষের হাতে যে সম্পদ রয়েছে তার চেয়েও আট ভাগ বেশি আছে। বাকি ৪০ ভাগ মানুষের হাতে ৪২ ভাগ আয় ৷ এরাই হয়তো মধ্যবিত্ত। তিনি বলেন, ‘নিম্ন মধ্যবিত্ত যারা আছেন, তারা দরিদ্র হয়ে পড়ছেন। সম্পদের অসমবন্টন এই পরিস্থিতিকে আরো প্রকট করছে। আর মধ্যবিত্তেরও তিনটি শ্রেণি আছে- নিম্ন, মধ্য এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত৷ তারা ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের চাকরির আয় এরইমধ্যে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। একটি অংশের চাকরি আছে, কিন্তু বেতন নেই। আবার কারো বেতন কমে গেছে। এসএমই সেক্টরে ধস নেমেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক ও ‘উন্নয়ন অন্বেষণের’ চেয়ারপারসন ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘যারা সরকারি চাকরি করেন তাদের আপাতত কোনো সংকট হবে না। কিন্তু যারা বেসরকারি খাতে আছেন তারা এখন জমানো টাকা খাওয়া শুরু করেছেন। এটি শেষ হলে ঋণ করে অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা করবেন। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে নিম্নবিত্তের কাতারে নেমে যাবেন। বাংলাদেশে ৯০ লাখ মানুষ আনুষ্ঠানিক খাতে চাকরি করেন। এর মধ্যে ১৫ লাখ সরকারি খাতে৷ বাকি ৭৫ লাখ মানুষ বেসরকারি খাতে। অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন ছয় কোটি আট লাখ মানুষ

আপনার মতামত লিখুন :

চাকরি ছাড়লেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫৭ কর্মকর্তা

চাকরি ছাড়লেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫৭ কর্মকর্তা

যাবতীয় নিত্যপণ্যের মূল্য ধার্য্য করে দেবে সরকার : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

যাবতীয় নিত্যপণ্যের মূল্য ধার্য্য করে দেবে সরকার : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

২৪-২৬ জুন পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত মহাসড়কে ট্রাক চলাচল বন্ধ-ডিএমপি

২৪-২৬ জুন পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত মহাসড়কে ট্রাক চলাচল বন্ধ-ডিএমপি

চালের আমদানি শুল্ক ১০% কমাল সরকার

চালের আমদানি শুল্ক ১০% কমাল সরকার

শ্রমজীবী মানুষের সাথে খেয়ালিপনা বন্ধ করুন : কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন

শ্রমজীবী মানুষের সাথে খেয়ালিপনা বন্ধ করুন : কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন

হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ইলিশ পাচার!

হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ইলিশ পাচার!

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj