নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ১৭ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, গণস্বাস্থ্যের কিট পরীক্ষা করে তারা দেখেন করোনা শনাক্তে এই কিট কার্যকর নয়। তবে, মুখে এই কথা বললেও বিএসএমএমইউর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে কিন্তু অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় এই কিটের কার্যকারিতার কথাই বলা হয়েছে।
এটা ঠিক যে প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে, সংক্রমণ সাত দিনের কম হলে শরীরে করোনার উপস্থিতি এই কিট দিয়ে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াও একই কথা বলেছিলেন।
আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং সাত দিনের কম সময় ধরে উপসর্গ রয়েছে, এমন ১০০ জন রোগীকে এই দ্রুত শনাক্তকরণ কিট দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে শুধুমাত্র ১১ শতাংশের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে সংক্রমণ শনাক্ত করা গেছে।
কিন্তু, অসুস্থতার শুরুর দিকে তো রোগীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না। শরীর রোগপ্রতিরোধ করা শুরু করার পরই রক্তে অ্যান্টিবডি আসা শুরু করে। এই প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ।
রিপোর্টে দেখা গেছে, সংক্রমিত হওয়ার পর দিন যত যাবে, তত এই কিটের ‘সেনসিটিভিটি’ বাড়বে। ‘সেনসিটিভিটি’ অর্থাৎ কত শতাংশ কোভিড-১৯ পজিটিভ নমুনা সঠিকভাবে শনাক্ত করেতে সক্ষম হয়েছে এই কিট।
৮-১৪ দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত ১০০ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই কিট ৪১ জনের শরীরে অ্যান্টিবডি শনাক্ত করতে পেরেছে এবং ৫৯ জনেরটা পারেনি।
অন্তত ১৪ দিন যাবৎ উপসর্গ নেই, এমন ১০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করার পর ৭৬ জনের শরীরে অ্যান্টিবডি শনাক্ত করতে পারে এই কিট। তার মানে আক্রান্ত হয়ে সুস্থতার পথে আছেন, এমন ব্যক্তিদের শনাক্তে এই কিটের সেনসিটিভিটি ৭০ শতাংশ।
বিএসএমএমইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ১৮ দিন যাবত উপসর্গ নেই এই নমুনাদলের ‘৯৫ শতাংশ কনফিডেন্স ইন্টারভাল’ ৬০ দশমিক ১৯ শতাশ থেকে ৭৮ দশমিক ১৬ শতাংশর মধ্যে। এর অর্থ, পরীক্ষাটি যদি পুনরায় করা হয় তাহলে ‘সেনসিটিভিটি’র ফলাফাল এই রেঞ্জের মধ্যেই পড়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ। তার মানে, এই দলের জন্য সেনসিটিভিটি ৭৮ দশমিক ১৬ শতাংশ পর্যন্ত উঠতে পারে।
পিসিআর পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের ১৪ দিন পরে অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় শতভাগ ‘সেনসিটিভিটি’ পাওয়া গেছে সুইজারল্যান্ডের স্বাস্থ্যসেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রোচের তৈরি করা অ্যান্টিবডি কিটে। গত মে’তে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) রোচের তৈরি করা কিট ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
গণস্বাস্থ্যের প্রধান গবেষক ড. বিজন কুমার শীল গতকাল এপিএস নিউজকে বলেছেন, ‘যেই সব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করার জন্য এই কিটের ব্যবহার সুপারিশ করেছে এই প্রতিবেদন, সেই কাজে কিটের অনুমতি চেয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে চিঠি দিচ্ছি।’
বিএসএমএমইউর সুপারিশে বলা হয়েছে, যেসব স্থানে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, সেখানে অসুস্থতার দ্বিতীয় সপ্তাহে এবং কোভিড-১৯’র উপসর্গ থাকা স্বত্ত্বেও পিসিআরও পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ এসেছে, সেসব ক্ষেত্রে এই কিট কিছুটা সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
দেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন সন্দেহভাজন রোগীরা পিসিআর পরীক্ষার ফল ছাড়া চিকিৎসা পাচ্ছেন না, তখন এই কিট দিয়ে পরীক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে একটি চিত্র তুলে ধরে কোভিড-১৯ র্যাপিড ডট ব্লট প্রকল্পের সমন্বয়কারী ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকারের কাছে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘এক রোগীর মধ্যে আট দিনের বেশি সময় ধরে উপসর্গ আছে এবং তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতে চাচ্ছেন। কিন্তু, তিনি আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাননি। সেক্ষেত্রে তার করোনা রয়েছে কি না, তা শনাক্তে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি গণস্বাস্থ্যের কিট ব্যবহার করতে পারে?’
জবাবে ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার বলেন, ‘হ্যাঁ, তিনি অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাতে পারেন। তবে, যদি ফল নেগেটিভ আসে, তাহলে ভাইরাল ক্লিয়ারেন্সের জন্য তার অ্যান্টিজেন পরীক্ষাও করাতে হবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি ফল নেগেটিভ আসে, এর মানে দুইটি বিষয় হতে পারে। হয় তিনি করোনায় আক্রান্ত নন, না হয় তিনি আক্রান্ত, কিন্তু, যথেষ্ট অ্যান্টিবডি না থাকায় র্যাপিড ডট ব্লট কিট শনাক্ত করতে পারেনি।
আর যদি ফল পজিটিভ আসে, তাহলে ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ও তার শরীর এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে অথবা তার করোনা হয়েছিল, কিন্তু, ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে গেছেন। সেই রোগী নিশ্চিন্তে কোভিড-১৯’র জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
এপিএস.২৫জুন/পিটিআই