দেশের সবচেয়ে বড় ক্যাডার সার্ভিস ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা’ ক্যাডারে শিগগিরই বড় ধরনের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে জুলাইয়ের প্রথমার্ধেই পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ উইং থেকে জানা গেছে, এবার এ ক্যাডারে একসঙ্গে দেড় হাজারেরও বেশি কর্মকর্তাকে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকও গত বুধবার শিগগিরই গণমাধ্যমকে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে কত জনকে পদোন্নতি দেওয়া হবে, তা তিনি বলতে রাজি হননি।
অবশ্য করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার পদোন্নতি ও পদায়ন একই সঙ্গে হচ্ছে না। বেশিরভাগ কর্মকর্তাকে ইনসিটু থাকতে হবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তবেই পর্যায়ক্রমে পদায়নের আদেশ জারি করা হবে।
কলেজ উইং জানায়, এবার সাড়ে ৩০০ অধ্যাপক, ২৭৫ সহযোগী অধ্যাপক এবং এক হাজার ১০০ সহকারী অধ্যাপক পদ শূন্য রয়েছে। তবে রিজার্ভ পদসহ (প্রশাসনিক পদ) পদোন্নতি কমিটির সভায় নানা কারণে পদের সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। শিগগিরই বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) সভা করে এসব পদের পদোন্নতি চূড়ান্ত করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার কর্মকর্তারা জানান, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের তিনটি স্তরে এ বছর পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে পদোন্নতি দেওয়া হবে অধ্যাপক পদে। তিনটি স্তরে এবার সবচেয়ে বেশি পদোন্নতি পাবেন বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ের শিক্ষকরা। অন্যদিকে পদ কম থাকার কারণে প্রাণিবিদ্যা, সংস্কৃৃত, ইসলামের ইতিহাস, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ের শিক্ষকরা কম পদোন্নতি পাবেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতি নিয়মিত প্রক্রিয়া হলেও প্রায় দু’বছর ধরে কোনো পদোন্নতি হয়নি এই ক্যাডারে।
এ বিষয়ে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই পদোন্নতি দিতে চেষ্টা করছি। পদ শূন্য না থাকায় এতদিন পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছিল না।
অধ্যাপক পদের জন্য এবার বিবেচিত হচ্ছেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ ও ১৫তম ব্যাচ। ১৪তম ব্যাচের একটি অংশ দুই বছর আগেই অধ্যাপক হয়েছেন। বাকিদের সবাই এবার বিবেচনায় আছেন। ১৪তম ব্যাচের ৫৮০ জন অধ্যাপক পদের জন্য ফিটলিস্টে আছেন। আর ১৫তম ব্যাচের রয়েছেন ৪০ জন। সহযোগী অধ্যাপক পদের জন্য এবার বিসিএসের ২২তম ব্যাচ মূল বিবেচনায় রয়েছে। তবে ২৪তম ব্যাচেরও কিছু কর্মকর্তা সহযোগী অধ্যাপক হবেন। তবে এই পদের ফিটলিস্ট এখনও প্রস্তুত করেনি মাউশি। আর সহকারী অধ্যাপক পদের জন্য এবার বিবেচনায় রয়েছেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এই পদের পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের খসড়া তালিকা গত মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে মাউশি। খসড়া তালিকায় দুই হাজার ৫০৮ জন প্রভাষক রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১০০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। এই কর্মকর্তারা আট থেকে ১০ বছর পর্যন্ত প্রভাষক পদে চাকরি করে যাচ্ছেন। খসড়া তালিকায় যাচাই-বাছাই শেষে এ মাসের মধ্যে ডিপিসির মাধ্যমে পদোন্নতির চূড়ান্ত তালিকা করা হবে বলে জানা গেছে।
বিসিএসের অন্যান্য ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি চালু থাকলেও শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি হয় বিষয়ভিত্তিক। এ নিয়মের ফলে অবসরের সময় ঘনিয়ে এলেও ১৪তম বিসিএসের পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা এখনও অধ্যাপক হতে পারেননি। অথচ ১৫ ও ১৬তম বিসিএসের অনেক কর্মকর্তা অধ্যাপক হয়ে আগেই তাদের টপকে গেছেন। এতে সরকারি কলেজে সিনিয়র শিক্ষকদের কাজ করতে হচ্ছে জুনিয়রদের অধীনে, যা তাদের হতাশার অন্যতম কারণ। কারণ ২০১৪ সালেই অধ্যাপক হওয়ার এ যোগ্যতা অর্জন করেছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর ঢাকা কলেজের এই ব্যাচের একজন শিক্ষক সমকালকে বলেন, তাদের পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিলে সরকারের কোনো বাড়তি খরচ হবে না। কারণ তারা ২০১৪ সাল থেকে অধ্যাপক পদের বেতন পেয়ে আসছেন। তবে চাকরি জীবনের শেষ সময় এসে তারা এখন মর্যাদা চান।
শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তারা জানান, বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়ার কারণে এই ক্যাডারে পদোন্নতি প্রক্রিয়া খুব ধীর। এ ক্যাডারে প্রভাষক পদে একটানা ১৭ বছর চাকরি করার দৃষ্টান্তও রয়েছে। কর্মকর্তারা চান, এ ক্যাডারেও ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি চালু হোক।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে বর্তমানে ১৫ হাজার ৬৩৪ কর্মকর্তা কর্মরত। এই ক্যাডারে মোট পদ ১৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার ৮৯২টি পদ বর্তমানে। এই ক্যাডারে নতুন করে আরো প্রায় দুই হাজার পদ সৃজনের প্রক্রিয়া চলছে।