অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এবার ব্যাপক সুযোগ দিল সরকার। মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে এই টাকা সাদা করা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে শেয়ারবাজার, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবেঞ্চার এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির অন্যান্য সিকিউরিটি। তবে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে এক বছরের জন্য। এছাড়া ১০ শতাংশ কর দিয়ে ব্যাংকেও জমা রাখা যাবে এই টাকা। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবে বলা হয়, নগদ, ব্যাংক জমা, সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন ধরনের স্কিমে এই টাকা বিনিয়োগ করা যাবে। সবচেয়ে বড়ো যে সুবিধা এলো, তা হলো এই বিনিয়োগ নিয়ে কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না। প্রশ্ন করতে পারবে না দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)।
অন্যদিকে আবাসন খাতে বিনিয়োগেও ব্যাপক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে কারো কোনো প্লট বা ফ্ল্যাটে এ ধরনের টাকা বিনিয়োগ থাকলে, তিনিও এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে এই টাকা সাদা করতে পারবেন। অতীতে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হতো পরবর্তী সময়ের জন্য। কিন্তু এবার দেওয়া হলো অতীতে অপ্রদর্শিত অর্থে কেনা সম্পদের ক্ষেত্রেও। ফলে যিনি যখনই অপ্রদর্শিত অর্থে যে পরিমাণ সম্পদ কিংবা প্লট-ফ্ল্যাট কিনে থাকুন না কেন, এবার নির্ধারিত হারে কর দিলেই প্রশ্ন করবে না আয়কর বিভাগ। শুধু আয়কর বিভাগ নয়, প্রশ্ন করবে না দুদকও।
এনবিআরের আয়কর বিভাগের বাজেট সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অতীতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সুযোগ দেওয়া হলেও এবার কোনো ধরনের জরিমানা থাকছে না। অন্যদিকে এই সুবিধার আওতায় তেমন মানুষ বিনিয়োগে আসতে চাইতেন না। কারণ দুদকসহ অন্য সংস্থার প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল। ঐসব সংস্থা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কর ফাইল উন্মুক্ত করত। এবার সেই বিধান বাতিল করা হচ্ছে। ফলে আশা করা হচ্ছে, বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগে আসবে। অর্থমন্ত্রী এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলেন, করদাতার রিটার্ন দাখিলে অজ্ঞতার কারণে কিছু অর্জিত সম্পদ প্রদর্শনে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। আগামী এক বছরের মধ্যে এসব অর্থ পুঁজিবাজারসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগে ১০ শতাংশ কর প্রদান করলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করতে পারবে না। এর ফলে অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থপ্রবাহ ও কর্মসংস্থান বাড়বে এবং রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে আশার কথা জানান তিনি।
বর্তমানে দেশে সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ। অর্থাত্ যারা নিয়ম মেনে কর পরিশোধ করেছেন তাদের এই হারে দিতে হয়েছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, যারা এই নিয়ম মানেন নি, তারা কর দেবেন ১০ শতাংশ হারে। থাকছে না কোনো ধরনের জরিমানাও।
অতীতে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা দেওয়া হলেও নির্দিষ্ট হারে কর পরিশোধ করে ঐ পরিশোধিত করের ওপর আরো ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হতো।