“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”
কাজী নজরুল ইসলামের নারী কবিতায় উক্ত উক্তির মূল্যায়ন কি দিতে পেরেছে আজকের এই সমাজ ব্যবস্থা?ক্ষয়ে যাওয়া সামাজিকীকরনের জন্য নারী পাচ্ছে কি তার প্রকৃত নিরাপত্তা।আঁতকে ওঠার মতো নানা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে নারীর জীবনে। ঠিক আমিও এই নিরাপত্তাহীনতার বাইরে নয়, জীবনে সম্মুখীন হতে হয়েছে এমনই লোমহর্ষক ঘটনার। আজ আমি শেয়ার করবো আমার জীবনের এমনি একটি ঘটনা।
একটা সময় হয়তো ঘটনাটি ভুলে যায় কিন্তু মনের ভেতর তৈরি হওয়া ভয়টা গেঁথে রয়। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকটা বঁখাটে ছেলের সম্মুখীন হয়েছিলাম।তাদের উদ্দেশ্য ছিল আমার মুখে কেমিক্যাল পাওডার ছোড়ার।তাদের অত্যাচারে ঠিকমত স্কুলে যেতে ভয় লাগে। প্রতিনিয়ত রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে বিরক্ত করে, বাজে ইঙ্গিত প্রদর্শন করে । প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব অস্বীকার করায় তাদের মধ্যে একজন এগিয়ে আসে এবংআমার দিকে এই এসিড ছোড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি পেছনে ফিরে চিৎকার করায় কিছু লোক এগিয়ে আসে, অত:পর তারা পালিয়ে যায়। নিশ্চিত করে বলা যায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর এবং মানুষের মন ই কেঁপে উঠেছে এমন ঘটনায়। সেদিন যদি লোকজন না থাকত তাহলে হয়তো আজ লিখতে পারতাম না। বিচার হয়নি এমন ঘটনার। বেড়েই চলেছে আমাদের চারপাশে এমন লোমহর্ষক ঘটনা
নিরাপত্তা যেন কোথাও নেই। ঠিক কখন কোথায় নারী নিরাপদ এই প্রশ্নের উত্তর কারো জানা নেই।কৈশোরে পা দিতে না দিতেই খেলতে যাওয়া নিষেধ ,একা একা বেড়াতে যাওয়া যাবে না, ওমুক কাজ করা যাবে না যেহেতু তুমি নারী, পোশাক পরিচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা, এসবকিছুই যেন নারীকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে নারী তুমি নিরাপদ নও। এত সতর্কতা ও বিধিনিষেধ এর পরেও কি রক্ষা পাই নারী? আমাদের এই শহরে ছিটিয়ে থাকা ভয়ংকার নরপিশাচরা ছিনিয়ে নেই নারীর শৈশব -কৈশোর। কাটা বিঁছিয়ে দেয় আমাদের জীবনে। এরকম মানুষেরা আজ দুর্বিষহ করে তুলেছে নারীর জীবন।কোনো নারীই আজ বলতে পারবে না সে নিরাপদ।
মেয়েরা জোরে কথা বলতে পারবে না, মেয়েদের বুদ্ধি কম,ছেলেরা সাহসী, মেয়েদের এত লেখাপড়ার কি দরকার, দুর চার ক্লাস পড়িয়ে বিয়ে দিয়ে দাও, এসব বিষয় শিশুর সামাজিকীকরনে পরিণত হয়েছে। ফলে সবার মনেই ছোট থেকে নারীর মর্যাদা থাকে না।ঠিক এভাবেই ছোট থেকে নারীকে হীনমর্যাদায় দেখতে দেখতে খারাপ মানসিকতার সৃষ্টি হয়। এমন সামাজিককরনে এসিড সন্ত্রাসীর ঘটনা অস্বাভাবিক নয়।এটি বর্তমনে আমাদের সমাজব্যবস্থার বহি:প্রকাশমাত্র।
নারীকে প্রকৃত নিরাপত্তার স্বাদ দিতে এবং নারী উন্নয়নে এর প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।জোরদার আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। যেসব উচ্ছৃঙ্খল লোকেরা এমন ঘটনা ঘটাবে ।তাদেরকে উক্ত অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে নজীর রাখতে হবে যাতে পরবর্তিতে এমন ঘটনা কেউ ঘটাতে না পারে। মহল্যার ভক্ষককৃত রক্ষক দ্বারা যেন মধ্যস্ততা বা শালিসের নামে ন্যায়বিচার বিঘ্নিত না হয় সেদিকে প্রশাসনের কঠোর নজর রাখতে হবে। কোনোরূপ বিচারে ত্রুটি থাকলে সেইটি আদালতে পেশ করতে হবে। সর্বোপরি আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন থাকতে হবে। সমাজের প্রতিটি মানুষকে এমন অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হতে হবে।
জাকিয়া আফরিন জিতু
অষ্টম শ্রেণী
শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় শৈলকুপা, ঝিনাইদহ