করপোরেট করের উচ্চ হারের কারণে দেশে বিনিয়োগ ব্যয় বেড়েছে। এতে করোনার কারণে সংকটে থাকা ব্যবসায়ীরা পড়েছে আরো বিপাকে। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছরে করপোরেট কর হার কমানো হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে করপোরেট করের হার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এবারে করোনার কারণে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের সামনা-সামনি প্রাক-বাজেট আলোচনা বাতিল করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, শ্রেণী, পেশার মানুষের কাছ থেকে অন লাইনে রাজস্ব বাজেট সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রস্তাবে করপোরেট কর হার কমানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণের কারণে দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীলে করপোরেট কর হার কমানো প্রয়োজন। করপোরেট কর হার কমানো হলে বিনিয়োগ ব্যয় কমবে।
বাংলাদেশে করপোরেট কর হার ভিয়েতনামের তুলনায় ১৫ শতাংশ, মালয়েশিয়ার তুলনায় ১১ শতাংশ, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের তুলনায় ১০ শতাংশ, পাকিস্তানের তুলনায় ৬ শতাংশ এবং ভারত ও ফিলিপাইনের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি।
বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সংগঠন থেকে পুঁজিবাজার গতিশীলে প্রতিবেশী দেশগুলির মতো বাংলাদেশেও করপোরেট কর হার নির্ধারণের দাবি করেছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ফোন অপারেটর, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সিগারেট প্রস্তুতকারক কম্পানি ছাড়া অন্য সকল কম্পানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নিবন্ধিত কম্পানি হতে লব্ধ লভ্যাংশ আয় ব্যতিরেকে সকল প্রকার আয়ের ওপর পাবলিকলি ট্রেডেড কম্পানি হলে ২২.৫ শতাংশ, নন পাবলিকলি ট্রেডেড কম্পানি (মূসক নিবন্ধিত) ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি হলে ৩০ শতাংশ, নন ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি হলে ৩২.৫ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংক হলে ৩৫ শতাংশ ধার্যের সুপারিশ করেছে।
তবে বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত নয় এমন বিদেশি কম্পানির প্রত্যাবাসনযোগ্য মুনাফার ওপর করপোরেট কর হার ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করেছে অনেক ব্যবসায়ী। অনেকে আগামী তিন অর্থ বছরে পর্যায়ক্রমে প্রগেসিভ হারে স্টক একচেঞ্জ মার্কেটে নন লিস্টেড কম্পানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান করপোরেট কর হারের পরিবর্তে কমানো এবং অন্য সকল স্তর থেকে ৫, ৭ ও ১০ শতাংশ হারে কমানোর দাবি জানিয়েছে।
এনবিআরে করা একাধিক ব্যবসায়ী সংগঠনের আবেদনে বাংলাদেশে নতুন কম্পনি সৃষ্টিতে উচ্চ হারের করপোরেট কর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
ভারতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে করপোরেট কর হার ৩০ শতাংশ থেকে পর্যায়ক্রমে কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একাধিক ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে আমাদের দেশে ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ট্রেডিং একই হারে কর নির্ধারণ না করে ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানির বিকাশে করপোরেট করের বিদ্যমান হার কমানোর কথা বলেছে।
গত কয়েক অর্থ বছর থেকেই সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে করপোরেট কর হার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছে ব্যবসায়ী নেতারা।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা সংক্রমণের জন্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক ধারা ব্যহত হয়েছে। অনেকে লোকসানে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে করপোরেট কর হার কমানো হলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অনেকে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাই করপোরেট কর হার কমানো হলে রাজস্ব আদায় কমবে না বরং বাড়বে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে করপোরেট কর কমাতে হবে। বিশেষভাবে করোনা সংকট থেকে কাটিয়ে উঠতে হলে অবশ্যই করপোরেট কর হার কমানো প্রয়োজন। এতে আপতত রাজস্ব আদায় কিছুটা কমলেও দীর্ঘমেয়াদে সরকার লাভবান হবে। রাজস্ব আহরণ বাড়বে।
এপিএস/০৪/পিটিআই/এনএস