ব্যারিষ্টার নূর মুহম্মদ আজমী
এক– ্প্রায়ই শোনা যায় ছেলেরা পৈতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের বঞ্চিত করে, আইন অনুযায়ী পাওনা ঠিকঠাক বুঝিয়ে দেয়না।
– এটি একটি প্রচলিত মারাত্মক ভুল। একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার সাথে সাথেই তার সকল সম্পদের মালিকানা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়ারিশদের কাছে চলে আসে। তার মৃত্যুর পরপরই ছেলে-মেয়েরা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্য ওয়ারিশরাও) আনুপাতিক হারে (২ঃ১) সমগ্র সম্পত্তির মালিক হয়ে যায়। সুতরাং, কেউ কাউকে দেয়া বা না দেয়ার প্রশ্ন একেবারেই অবান্তর। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, কেউ যদি তার অংশ না ছাড়ে এবং লিখিতভাবে বা দলিল করে অন্যকে না দেয় তাইলে তা আজীবনই তার মালিকানায় থেকে যাবে, এমনকি নিজে দখল নিতে না পারলেও। কোনো মেয়ে যদি দেখে যে ছেলেরা পৈতৃক সম্পত্তি দিতে চায় না, বা সামান্য কিছু দিতে চায়, তার মানে হচ্ছে ছেলেরা জোর করে সেসব দখলে রেখেছে। ছেলেদের দখলে থাকলেও আইন অনুযায়ী মেয়েরা তাদের নির্দিষ্ট অংশের মালিক এবং মেয়েরা চাইলে তা উপযুক্ত মূল্যে ছেলেদের কাছে বা অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দিতে পারে।
দুই- মেয়েরা পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার হিসেবে বসতবাড়ির অংশ পায়না।
– এটি একটি প্রচলিত ভুল ধারণা। কোনো ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ তার দায়-দেনা পরিশোধের পর ওয়ারিশগন নিজেদের মাঝে ভাগ বন্টন করে নেবে। আইন অনুযায়ী বসতবাড়ি, ব্যাবহারিক সামগ্রী, নগদ টাকা সহ সমগ্র সম্পদই বন্টিত হবে। কে কী নেবে বা কোন অংশ নেবে তা ওয়ারিশগন নিজেরা বসে ঠিক করে নেয়াই উত্তম। নইলে তৃতীয় পক্ষ অথবা আদালত হস্তক্ষেপ জরুরি।
তিন- মেয়েরা মায়ের সম্পত্তিতে কোনো অংশ পায়না, অথবা মেয়েরা মায়ের সম্পত্তিতে ছেলেদের সমান অংশ পায়।
– দু’টোই ভুল। বাবা-মা দু’জনেরই সমগ্র সম্পদে ছেলে-মেয়েরা ২ঃ১ হারে অংশ পাবে, অর্থাৎ ছেলে যা পাবে মেয়ে তার অর্ধেক পাবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কেউ যদি মনে করে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, অর্থাৎ অন্য কেউ তা দখল করে রেখেছে, সেক্ষেত্রে আইনগত প্রতিকার হচ্ছে আদালতে বন্টন বা বাটোয়ারা মামলা (Partition Suit) করা।
লেখকঃ ব্যারিষ্টার নূর মুহাম্মদ আজমী, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট