মেহেদী। আমীর খসরু মেহেদী। ৯ এপ্রিল ১৯৫৮ সালে ঢাকায় জন্ম গ্রহন করেন। গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর ইউনিয়নস্থ উত্তর তারাবুনিয়ায়। চার ভাই বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ মেহেদী ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী ও বিনয়ী। শিক্ষিত পরিবারে বেড়ে উঠা মেহেদীর বাবা ওহাজ উদ্দিন মোল্লা ছিলেন একজন সরকারি চাকুরিজীবী, যিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে গ্র্যাজুয়েশন করা। বাবার চাকুরির সুবাদে তাঁর শৈশব কাটে মুন্সিগঞ্জ জেলায়। মেধাবী মেহেদী ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করে বাবার পদাঙ্ক অনুসরন করতে থাকেন। তারই ধারবাহিকতায় মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। উচ্চ মাধ্যমিকের সময়টা কাটে মানিকগঞ্জে। জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তন করে উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক বিভাগে পড়াশুনা করেন। সেখানেও অর্জন প্রথম বিভাগ। মনের কোণে লালিত স্বপ্ন পূরনে ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক সম্পন্ন করে উক্ত বিষয়েই প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বেষ্টিত সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হলের ছাত্র ছিলেন। হলের বড় ভাই, ছোট ভাই এবং বন্ধুদের সাথে ছিল সহোদর সুলভ সম্পর্ক। হলের মেধাবী ছাত্র হিসেবে হাউজ টিউটর ও হল প্রভোস্টের সাথেও ছিল খুবই ভাল সম্পর্ক। হানা দেয় আর্থিক অনটন । হাউজ টিউটরের পরামর্শে পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনিও করতেন। স্নাতক সম্পন্ন করার পরই ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারে সাব-এডিটর পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পত্রিকায় কাজ করার পাশাপাশি মাস্টার্সের পড়াশুনাও চালিয়ে যান।
পড়াশুনা শেষ করে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারি পরিচালক পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮২ (৫ম) ব্যাচে ২৮ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে অডিট এন্ড একাউন্টস ক্যাডারে যোগদান করেন। সততা ও নিষ্ঠার সাথে সরকারি দায়িত্ত্ব পালন করতে থাকেন। উক্ত ক্যাডারের বিভিন্ন গুরুত্ত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ত্ব পালন করেন। তিনি চাকুরিরত অবস্থায় লন্ডনে পড়াশুনা করতে যান। পড়াশুনা সম্পন্ন করে এক বছর পর আবার কর্মস্থলে আসেন। তিনি বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়ে সিনিয়র হিসেবে দায়িত্ত্ব পালন করেন। তিনি ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ত্ব পালন করেন। ৩ জুন ২০১৪ সালে তিনি কন্ট্রোলার জেনারেল অব ডিফেন্স ফাইন্যান্স (সিজিডিএফ) হিসেবে দায়িত্ত্ব পালন করেন ।
মেধাবী ও অত্যন্ত পরিশ্রমী এই সরকারী কর্মকর্তা সিনিয়র জুনিয়র ও সমপর্যায়ের সকল সহকর্মীদের প্রিয়ভাজন ছিলেন। তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনে আমরিকা, রাশিয়া, ইটালি, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, মিশর, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমন করেন এবং ২০১৭ সালে কন্ট্রোলার জেনারেল অব একাউন্স (সিজিএ) এর দায়িত্ব হতে চাকুরি জীবন শেষ করেন।
ব্যক্তি জীবেনে তিনি কারো সমালোচনা করতেন না। অত্যন্ত সৎ এবং পরহেজগার ছিলেন। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে তিনি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলোতে (যেমন লালবাগ শাহী মসজিদ, গুরে ই শহীদ মসজিদ, লালবাগ কেল্লা মসজিদ, তারা মসজিদ ) নামাজ আদায় করতে যেতেন।
তিনি কিডনি, নিউরোলজি এবং লিভারের জটিল সমস্যা নিয়ে ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল, কাকরাইলে ভর্তি হন। অবশেষে স্ত্রী শিল্পী খসরু, বড় ছেলে রিফাত খসরু চমক, ছোট ছেলে শাদাত খসরু বিলিয়া, মেয়ে নাজিফা খসরুসহ অনেক সহকর্মী এবং অসংখ্য শুভাকাংখীদের কাঁদিয়ে গত ১৮ মে বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। এরই মধ্য দিয়ে এস এম হল তথা দেশ একটি নক্ষত্র হারাল। আমরা তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
লেখকঃ জে. ইউ. মিজান, সাবেক শিক্ষার্থী, এসএমহল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।