করোনা মহামারিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা লন্ডভন্ড। ঘরে বন্দি সব স্তরের শিক্ষার্থী। হাতে গোনা কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা চালিয়ে গেলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে। এ অবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রশ্ন, চলতি বছরে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা কী হবে, নাকি গত বছরের মতো বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই অটো প্রমোশন পাবে?
শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর নানা পরিকল্পনা করেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা ছাড়াই প্রমোশন দিতে হয়েছে। তবে প্রমোশন দেওয়া হলেও আগের বছরের ধারাবাহিকতা রক্ষায় পরবর্তী শ্রেণিতে রিকভারির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তা-ও বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে চলতি বছরের বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।
চলতি শিক্ষাবর্ষে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু হয়। অ্যাসাইনমেন্ট জমা হচ্ছে স্কুলে। শিক্ষকেরা সেগুলো মূল্যায়ন করছেন। একটি সূত্র বলছে, যদি কোনোভাবেই বার্ষিক পরীক্ষা না নেওয়া যায়, অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নেই শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হবে। এ বিষয়টি অটোপাশের মতো হলেও অটোপাশ বলা হবে না।
শিক্ষার কারিকুলাম নিয়ে কাজ করা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, গত বছর বার্ষিক পরীক্ষা না হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য রেমিডিয়াল প্যাকেজের পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে ছিল জানুয়ারিতে স্কুল খোলার পর ২০২০ শিক্ষাবর্ষে যে বিষয়গুলো বাদ পড়েছে, সেগুলো চলতি শিক্ষাবর্ষের (২০২১ শিক্ষাবর্ষ) পাঠদানের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। চলতি বছরের কোন বিষয়ের সঙ্গে গত বছরের কোন বিষয় যুক্ত করে পাঠদান করালে ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, তার একটি চূড়ান্ত পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্কুল না খোলার কারণে সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি। এ কারণে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া বা অন্য কোনো চিন্তা করা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার যেভাবে বেড়ে আছে, তাতে চলতি বছরে কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। তবে শিগিগর যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না এটা নিশ্চিত। এ কারণে শিক্ষা কার্যক্রমের পরিকল্পনাও নিতে পারছে না।
শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের স্কুল কার্যক্রম না চললে, আর আগামী বছরের জানুয়ারিতে স্কুল খোলা গেলে শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ সইতে হবে। প্রথম থেকে দশম শ্রেণির কারিকুলাম একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সাজানো। কোন বয়সে একজন শিক্ষার্থীর কতটুকু আয়ত্ত করার ক্ষমতা আছে, সে আলোকেই শ্রেণিগুলোর কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছে। একটি বর্ষের পাঠ্যবই না পড়ে ওপরের শ্রেণির পাঠ্যবই পড়লে শিক্ষার্থীও পড়াশোনার ধারাবাহিকতা হারাবে। অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারবে না। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০২২ শিক্ষাবর্ষ) পাঠদান প্রক্রিয়া চলবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে স্কুল খোলা গেলে একজন শিক্ষার্থী ২০২০, ২০২১ ও ২০২২—এই তিন বর্ষের কারিকুলামের চাপে পড়বে।
তবে অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের কোন প্রকার পড়াশোনার চাপ না দিতে অভিভাবকদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা ঘরে বন্দি থেকে বলতে গেলে ট্রমাটাইজ হয়ে গেছে। তারা সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা বা স্কুলের পরিবেশ থেকে দীর্ঘ সময় বঞ্চিত। এরই মধ্যে পড়াশোনার চাপ দিলে ভালোর চেয়ে রবং আরো ক্ষতি হবে।
এই কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছর স্কুল খোলা গেলে পড়াশোনার কোনো চাপ থাকবে না। শিক্ষার্থীদের জন্য নানা ধরনের খেলাধুলা ও শিশু বিনোদনের নানা আয়োজন থাকবে স্কুলগুলোতে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস থাকবে। থাকবে আনন্দ। চলতি বছরের এসএসসি, এইচএসসি, জেএসসি, পিইসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এই স্তরের মূল্যায়ন ও পরীক্ষা নিয়ে সরকারের নানামুখী পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত তাদের দুুশ্চিন্তায়ও ফেলেছে। তবে এ বিষয়ে আজ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন শিক্ষামন্ত্রী। এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি পাবলিক পরীক্ষার কী হবে—এ বিষয়ে আজ জানা যাবে।