কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ হিন্দি গানে শিক্ষার্থীদের মাতালেন বাংলা বিভাগের শিক্ষক খাদেমুল ইসলাম। ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে হিন্দিতে “রাপ্তা রাপ্তা ও মেরী’ গানটি পরিবেশন করেন তিনি এবং পরবর্তীতে সেটি ফেসবুকে আপলোড দেয়া হলে অনেকে সমালোচনা করেন। যতদূর জানা যায় গানটি তিনি গিয়েছিলেন ভাষার মাস ফেব্রুয়ারীতে। তার কিছু পরে সেটি আপলোড হলেও ভাষার মাসে তার এমন গান পরিবেশন ভাবিয়ে তুলছে, অনেকে সমালোচনা করছেন প্রকাশ্যে।
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।” এ গান আজও প্রতিটি বাঙালির শরীরের লোমকূপকে শিহরিত করে, শিহরিত করবে যতদিন বাংলা থাকবে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার- এদের রক্তদান শুধু ভাষার স্বিকৃতিই দেয়নি মুক্তিযুদ্ধের জন্য রসদ জুগিয়েছিলো। কিন্তু এমন ইতিহাস গড়ার পবিত্র মাসে বাংলা শিক্ষকের হিন্দি গান পরিবেশন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আবার উনার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেটেও দেখা হিন্দি ভাষাতে গানের কথা লেখা। এমন বিষয়টি সচেতন মহল স্বাভাবিক বলছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করে শিক্ষকতার মত মহান পেশাকে যিনি বেছে নিয়েছেন, প্রকান্তরে তিনি বাংলাকে, বাংলার গানকে এবং তার ইতিহাসকে সমুন্নত রেখে তা পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষা দেয়ার গুরু দায়িত্বকেই কাধে তুলে নিয়েছেন বলে অনেকে মনে করতেন কিন্তু তার ভাষার মাসে এমন হিন্দী গান পরিবেশন ও ফেসবুকের পোষ্টেও তার নিদর্শন থাকা বিষয়টি স্বাভাবাক চোখে কেউ দেখছে না।
পৃথিবীর বুকে আমরাই একমাত্র জাতি যে মাতৃভাষার জন্য বুক ঝাঁঝরা করেছি। রক্তে রঞ্জিত করেছি রাজপথ। তাইতো আমাদের মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। আমাদের ভাষা শুধু ভাষা নয়, একটা ভালবাসার নাম, একটা গর্বিত জাতির নাম, একটা গর্বিত ইতিহাসের নাম। কিন্তু আজ যদি সেই শিক্ষকই বাংলা ভাষাকে শিক্ষাদানের জন্য বাংলার সহঃ অধ্যাপক হিসেবে কোন মহাবিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় সেই প্রতিষ্ঠানেরই বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হিন্দিতে গান পরিবেশন করেন, তাহলে তা কতটুকু সঠিক বা অন্যায় হবে, এমন প্রশ্ন অনেকেই করছেনন।
তার গানের একটি ভিডিও আমাদের হাতে এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে। বেশ কিছুদিন আগের এই ভিডিও টিতে যাকে দেখা যাচ্ছে উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সনদপ্রাপ্ত মোহাম্মদ খাদেমুল ইসলাম। বর্তমানে উনি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাগেশ্বরী সরকারী মহাবিদ্যালয়ে (সাবেক নাগেশ্বরী ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়) কর্মরত আছেন বাংলার শিক্ষক হিসেবে, তাও আবার বাংলা বিভাগীয় প্রধান পদে।
এরকম একটি অবস্থানে থেকে তারই ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে হিন্দিতে “রাপ্তা রাপ্তা ও মেরি……” গানটি পরিবেশন করে অন্যরকম কোন বার্তা কি তিনি দিচ্ছেন পরবর্তী প্রজন্মকে, তা ভাবনার বিষয়। বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের নাকের ডগার উপরে ঘটলেও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা তো নেয়া হয়নি; উপরন্তু তারই কিছু সহকর্মী এটিকে ফেসবুক এ সম্প্রচারও করেছেন। যেখানে দেখা যায় অবুঝপ্রাণ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে সেসব সহকর্মীরাও নেচে-গেয়ে তাল দিচ্ছেন। বিদেশী ভাষা ও সংস্কৃতির আগ্রাসন রোধে যারা কাজ করবেন, তাদের এহেন আচরণ ভাবিয়ে তুলেছে অনেককেই।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু প্রাক্তন ও সমসাময়িক ছাত্র-ছাত্রীর সাথে যোগাযোগ করলে তারা মত দেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় শিক্ষা নিয়ে, বাংলা ভাষাকে শেখানোর মশাল যার হাতে তার এ ধরণের কাজ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য তথা ভাবমূর্তি ক্ষূণ্ণ হয়েছে। এ ঘটনার তদন্তস্বরুপ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে তারা শিক্ষা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
অনেকে আবার দাবী করছেন সরকারের শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও নিরিক্ষণ পদ্ধতির গোড়ায়গলদ ব্যবস্থাপনাকে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন বিভাগীয় শহরের দূরবর্তী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার মান-নিয়ন্ত্রণে শিক্ষাবোর্ডের গাফিলতিকে।
এ ব্যাপারে উক্ত শিক্ষক জনাব মোঃ খাদেমুল ইসলামের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।