চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীর পরিবর্তে বদলি সাজা ভোগকারী মিনু বেগমের ঘটনা ক্রিমিনাল জাস্টিসের ওপর প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার মামলাটিতে শুনানির সময় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
মিনুর আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘মামলার শুনানির সময় আদালত মন্তব্য করেছেন এটি একটি আনফরচুনেট ঘটনা। ক্রিমিনাল জাস্টিসের ওপর একটি প্রতারণা। এটা একটা ফ্রড। এই ফ্রডের রুট খুঁজে বের করতে হবে। রুট খুঁজে বের করতে ইনভেস্টিগেশন করতে বলা হয়েছে। এটাই বাকি পদ্ধতি।’
আজকের আদেশের ব্যাপারে জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, ‘প্রথম অর্ডারে মিনুকে মুক্তি দিতে বলেছেন আদালত। দ্বিতীয়টিতে কুলসুমকে গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে। তৃতীয়টিতে তিন আইনজীবীসহ চারজনকে সশরীরে হাজির হয়ে লিখিত আকারে ব্যাখা দিতে বলা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন আইনজীবী, অন্যজন আইনজীবী সহকারী। আগামী ২৮ জুন লিখিত আকারে এ তিনজনকে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখা দিতে বলা হয়েছে।
সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যখা দেবেন চট্টগ্রামের নারী ও শিশু আদালত-২ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এমএ নাসের, আইনজীবী বিবেকানন্দ ও নুরুল আনোয়ারসহ চারজন।
আদালতে মিনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশির মনির। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশির উল্লাহ। কুমসুমের আইনজীবী ছিলেন ইকবাল হোসেন।
ইকবাল হোসেনের কাছে আদালত জানতে চান মামলার প্রয়োজনীয় নথিপত্র কে আপনাকে সরবরাহ করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের নারী শিশু আদালত-২ এর পিপি এমএ নাসেরসহ চারজন। তখন চারজনের নাম আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে গত ২৪ মার্চ হত্যা মামলাটির নথি বিশেষ বাহকের (স্পেশাল ম্যাসেঞ্জার) মাধ্যমে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এই মামলায় মিনুর পক্ষের আইনজীবী জানান, কারাগারের একটি বালাম বই দেখতে গিয়ে মিনুর সাজা খাটার বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে দেখা যায় একজনের পরিবর্তে যাবজ্জীবন সাজা খাটছেন এই নারী।
পরবর্তী সময়ে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে এ মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালত। দ্রুত সমাধানের জন্য আদেশের একদিন পর মামলার উপনথি হাইকোর্টে পাঠানো হয় বিশেষ বাহকের (স্পেশাল ম্যাসেঞ্জার) মাধ্যমে।
মহনগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউট (পি পি) মো. নোমান চৌধুরী বলেন, আদালতে সংরক্ষিত ছবি সম্বলিত নথিপত্র দেখে কুলসুম আক্তার আর মিনু এক নয় বলে নিশ্চিত হয়েছেন। যেহেতু ইতোমধ্যে এ মামলার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হয়েছে তাই মামলার উপনথি দ্রুত সময়ের হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে।
হত্যা মামলায় আদালত যাবজ্জীবনসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন কুলসুম আক্তারকে। কিন্তু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেল খাটছেন মিনু নামে এক নারী। নামের মিল না থাকার পরও কুলসুম আক্তারের বদলে মিনু চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন দুই বছর নয় মাসের বেশি সময় ধরে।
কোনো কিছুর মিল না থাকায় একজনের স্থলে আরেকজন জেল খাটার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।