কালো টাকা বৈধ করার সুযোগকে দুর্নীতিসহায়ক, বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করে আসন্ন বাজেটে এই সুযোগ না রাখার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে কালো টাকা সাদা করার মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
শনিবার (২২ মে) এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, দীর্ঘমেয়াদে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা সত্ ও বৈধ আয়ের ব্যক্তি করদাতাকে নিরুত্সাহিত করবে। সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে দুর্বল করার মাধ্যমে আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে কোনো চেষ্টাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। এসব শঙ্কা বিবেচনায় রেখে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ নীতির প্রতি সামঞ্জস্য রেখে নতুন বাজেটে (২০২১-২২ অর্থবছর) কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বাতিল করতে হবে।
‘দেশের অর্থনীতিতে যতদিন অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে, ততদিন তা ঘোষণার সুযোগ থাকবে’ বলে অর্থমন্ত্রীর যে বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাজেটে অর্থের উত্স নিয়ে যে কোনো ধরনের প্রশ্ন করার বিধান উঠিয়ে দিয়ে বৈধ উপায়ে অর্জিত ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকার মধ্যকার ফারাক একাকার করে দেওয়া হয়েছে। এমন বাস্তবতায় কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ অনির্দিষ্ট মেয়াদে রাখার পরিকল্পনা দেশের কর ব্যবস্থায় ন্যায় ও ন্যায্যতার প্রশ্নকে প্রকট করে তুলবে এবং দুর্নীতিবাজদের জন্য করোনাকালীন সময়ে নতুন প্রণোদনা হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই এমন অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী পরিকল্পনা থেকে সরকার সরে আসবে সেটিই প্রত্যাশিত।
মাত্র ১০ ভাগ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে সত্ করদাতারা কেন সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কর দেবেন?- এমন প্রশ্ন রেখে ড. জামান বলেন, সাময়িকভাবে এমন সুযোগ থেকে সরকার কিছুটা রাজস্ব পেলেও ধীরে ধীরে তা বড়সংখ্যক করদাতাদের খেলাপি হতে উত্সাহিত করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব ক্ষতির মাত্রাকে বাড়িয়ে দেবে এবং কর খেলাপির নতুন এক সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করবে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেকর্ড ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বৈধ হবার খবরে নীতনির্ধারক মহলে যে সন্তুষ্টির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, সেটি সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের প্রতি একরকম উপহাসই বলা চলে। কেননা মহামারির মধ্যেও বিপুল অর্থ সাদা করার প্রবণতা বলে দেয়, দেশে একটি দুর্নীতিসহায়ক ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে এবং সেটি যে কোনো পরিস্থিতিকেই নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজে লাগাতে প্রস্তুত দুর্নীতিগ্রস্তরা।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদানের অসাংবিধানিক চর্চা বন্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময়। কালো টাকার মালিকদের সম্পদের উত্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে কার্যকর জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে দুর্নীতির মহোত্সবের হ্রাস টেনে ধরা যায়।