নিজস্ব প্রতিবেদক,
ভাড়া না দিতে পারায় ভাড়াটিয়াকে মারধরের মামলায় গ্রেপ্তার বাড়িওয়ালা এক নারীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ বুধবার এই আদেশ দেন। ওই নারীর নাম নূর আক্তার। ভাড়াটে দম্পতির অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় তাদের বের করে দেওয়া হয়।
পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, ভাড়াটিয়াকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া এবং মারধরের মামলায় গ্রেপ্তার বাড়িওয়ালা নূর আক্তারকে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। আর আজ বুধবার তাঁকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পাঁচদিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে কলাবাগান থানা-পুলিশ। উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত বাড়িওয়ালা নূর আক্তারকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান বুধবার গনমাধ্যমকে বলেন, ভাড়া দিতে না পারায় ভাড়াটিয়াকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া এবং মারধরের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন বাড়িওয়ালা নূর আক্তার। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে পান্থপথ এলাকার পাঁচতলা একটি বাসার নিচতলায় ভাড়া নেন সেলিম ও কুলসুম বেগম দম্পতি। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে গত মার্চ মাসের ভাড়ার টাকা দিতে পারেননি। যে কারণে গত ১৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের বাসা থেকে বের করে দেন। তখন নূর আক্তার নিজে ৯৯৯ তে ফোন দেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ দেন, সেলিম দম্পতি তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। খবর পেয়ে কলাবাগান থানা-পুলিশের একটি দল সেখানে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে, বাড়িওয়ালা নূর আক্তার মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আরও বলেন, আমরা বাড়িওয়ালা ওই নারীকে বারবার অনুরোধ করেছিলাম, রাতটুকু অন্তত সেলিমদের থাকতে দেন। সকালে বিষয়টি সুরাহা করা হবে। কিন্তু ভাড়াটিয়াদের আর তিনি বাসায় ঢুকতে দেননি। পরে বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন ভাড়াটিয়া সেলিম।
ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়া সেলিমের স্ত্রী কুলসুম বেগম মুঠোফোনে দাবি করেন, ‘আমার দুই মেয়ে। ছোট মেয়ের বয়স দুই মাস। আমার স্বামী সেলিম পান্থপথে কাজ করেন। গত ডিসেম্বর মাসে ১৬ হাজার টাকা ভাড়ায় আমরা নূর আক্তারের বাসায় উঠি। বাসায় উঠার পর থেকে ঠিকমতো ভাড়া দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে স্বামীর কাজকর্ম না থাকায় গত মার্চ মাসের ভাড়া আমরা দিতে পারিনি। যে কারণে এই মাসের শুরু থেকে বারবার বাড়িওয়ালা আমাদের ভাড়া দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। বারবারই আমরা বাড়িওয়ালাকে বলছিলাম, টাকা থাকলে তাঁরা আগেই ভাড়া দিয়ে দিতেন। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে বাড়িওয়ালা এসে ভাড়া দেওয়ার জন্য চাপ দেন। ভাড়া না দিতে পারলে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলেন। বাসা থেকে বের হয়ে যেতে না চাওয়ায় তিনি পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ আসার পর সব ঘটনা শুনে বাড়িওয়ালাকে অনুরোধ করেন, রাতটুকু যেন তাঁদের থাকতে দেওয়া হয়। কিন্তু থাকতে দেননি বাড়িওয়ালা।
কুলসুম বেগমের অভিযোগ, ‘বাসায় উঠতে না পেরে দুই মাসের বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে ছিলাম। পরে থানায় অভিযোগ দিই। আমি আমার এক আত্মীয়ের বাসায় যাই। পরে র্যাব গতকাল আবার ওই বাসায় উঠিয়ে দিয়ে গেছেন।’
কলাবাগান থানার পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সেলিম-কুলসুম দম্পতিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। খাবার-দাবার দেওয়া হয়েছে। সূত্রঃ প্রথম আলো অনলাইন।
এপিএস/২২এপ্রিল/পিটিআই