দেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল-কলেজে শূন্য পদ প্রায় ৮০ হাজার। অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্র্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) দ্বারা নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী প্রার্থী রয়েছেন লক্ষাধিক। কিন্তু গত ২ বছর ধরে নিয়োগ আটকে আছে। এই নিয়োগের জন্য বেঁধে দেওয়া বয়সসীমা (৩৫ বছর) পার হয়েছে প্রায় ১০ হাজারের বেশি প্রার্থীর। নিয়োগ প্রত্যাশীরা বলছেন, কর্র্তৃপক্ষের কারণেই তারা নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন। সরকার চাইলেই নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে পারে। তবে এনটিআরসিএ কর্র্তৃপক্ষ বলছে, আইনি জটিলতার কারণে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি এতদিন। তবে খুব শিগগিরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। কিন্তু শিক্ষক সংকটের কারণে এতদিন ধরে ভুগছে শিক্ষার্থীরা।
এনটিআরসিএ ২০০৫ সাল থেকে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধন পরীক্ষার আয়োজন করে আসছে। এ পর্যন্ত একটি বিশেষ পরীক্ষাসহ ১৫টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হয়েছে। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা এনটিআরসিএ আয়োজন করে থাকলেও নিয়োগ চূড়ান্ত করত সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠলে ২০১৫ সাল থেকে এনটিআরসিএকে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত দুটি গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে দুই দফায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এনটিআরসিএ। এতে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষক। এখন তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির অপেক্ষায় এনটিআরসিএ।
এনটিআরসিএ’র আইন অনুযায়ী, লিখিত পরীক্ষার ৬০ দিনের মধ্যে ফল দিতে হবে। কিন্তু ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয় গত বছরের জানুয়ারিতে। ১১ হাজার ১৩০ জন পরীক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে পাস করেন। এক বছর অতিক্রম করলেও এখনো নিয়োগ পাননি কোনো শিক্ষক। এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা জানান, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির ঠিক আগমুহূর্তে নিয়োগ পেতে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনে চাকরিবঞ্চিত ২ হাজার ২০০ জন হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলার রায় তাদের পক্ষে গেলে তাদের নিয়োগ দিতে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। এ কারণে ১৫তম নিবন্ধনের তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারিতে দেরি হয়। ১৩তম নিবন্ধন নিয়ে মামলার কার্যক্রম শেষ হলে ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন সম্পর্কে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে যাদের বয়স ৩৫ বছর, তারাই নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ও তিতুমীর কলেজের অর্থনীতি বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থী সান্ত আলী \ বলেন, ‘৩য় গণবিজ্ঞপ্তির জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার শূন্যপদের শিক্ষক নিয়োগ অপেক্ষমাণ। পরীক্ষাসহ যাবতীয় কার্যক্রম গত বছরের জানুয়ারিতে সম্পন্ন হলেও আজ পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি। যার ফলে লক্ষাধিক নিবন্ধিত বেকার শিক্ষক নানা দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আজ আমরা অবহেলিত। অনেকের বয়স ৩৫ ঊর্ধ্ব হয়ে গেছে ফলে তারা আবেদনের সুযোগ হারিয়েছেন।’
এদিকে এনটিআরসিএ’র কর্তকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারীর কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে শিক্ষক সংকটের ব্যাপারটি তেমনভাবে বোঝা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি নিতে বলেছে সরকার। খোলার আগে শিক্ষক নিয়োগ শেষ করা না গেলে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণদের নিয়ে একটি মেধাতালিকা তৈরি করা হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে এমপিও নীতিমালা ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১৩তম নিবন্ধিত প্রার্থীদের সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। এ অবস্থায় শূন্যপদের তালিকা চূড়ান্ত হলেও নিয়োগ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা প্রায় ৪০০টি মামলা করেছেন। এতে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
পরে আইন মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই জটিলতা কাটিয়ে উঠলেও এনটিআরসিএ নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করছে বলে দাবি নিয়োগপ্রত্যাশীদের।
তারা বলছেন, আইনি যে জটিলতা ছিল তা কেটে গেছে ইতিমধ্যে। কিন্তু দ্রুতগতিতে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু না করে বিলম্ব করছে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ।
এনটিআরসিএ থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। মে মাসের মধ্যে এর ফল প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে প্রথম থেকে ১৫তম নিবন্ধনের মেধাতালিকায় ছয় লাখ ৩৪ হাজার ১২৭ জন রয়েছেন।
মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় এতদিন নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছিল না বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে এনেছি। নিয়োগ কার্যক্রম দিতে এনটিআরসিএকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে কাজও শুরু করেছে। আশা করছি শিগগিরই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা সম্ভব হবে।’
এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শের পর এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।’