নিম্ন আদালতে সব কাজ বাংলা ভাষায় হলেও উচ্চ আদালতে আবেদন দাখিল থেকে রায় পর্যন্ত, প্রায় সবই হয় ইংরেজিতে। হাতেগোনা কয়েকজন বিচারপতি বাংলায় রায় লিখলেও ইংরেজিতেই লেখেন অধিকাংশ বিচারপতি। তাই এবার উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের দেওয়া রায় ও আদেশ সাধারণ মানুষের বোধগম্য করতে বাংলায় অনুবাদের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ‘আমার ভাষা’ নামের সফটওয়্যার।
আজ সন্ধ্যায় সফটওয়্যারটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলা অনুবাদ করা যাবে উচ্চ আদালতের রায় ও আদেশগুলো। আইন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং ভারতের কারিগরি সহায়তায় তৈরি করা আমার ভাষা সফটওয়্যারটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যায় আমার ভাষা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত থেকে সফটওয়্যার উদ্বোধন করবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত থাকবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
উচ্চ আদালতের রায় ও আদেশ সাধারণ মানুষের কাছে সহজে বোধগম্য করতে নেওয়া এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন আইনজীবীরাও। তারা বলেন, রায় ও আদেশ বাংলায় অনুবাদে এ ধরনের একটি মাধ্যমের অপেক্ষা করছিলাম। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সরকার উচ্চ আদালতসহ সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত বছর এক অনুষ্ঠানে বাংলায় রায় দিতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ইংরেজি রায়গুলো বাংলায় অনুবাদ করে বিচারপ্রার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে বলেছিলেন। তিনি বলেন, সেই নির্দেশনার আলোকে সফটওয়্যার তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়েছি। এর ফলে উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ দিতে যে সমস্যাগুলো রয়েছে, তা অনেকাংশেই থাকবে না।
কীভাবে কাজ করবে ‘আমার ভাষা’ : সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানিয়েছে, উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের দেওয়া রায় ও আদেশ অনুবাদের জন্য ‘আমার ভাষা’ নামে সফটওয়্যারটি বেশ কিছুদিন ধরেই পরীক্ষামূলকভাবে চলছিল। এটি মূলত একটি ওয়েব ভিত্তিক সফটওয়্যার।
ব্যবহারকারী নিজের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এই সফটওয়্যারে প্রবেশ করতে পারবেন। অনুবাদের জন্য ইংরেজিতে দেওয়া রায় বা আদেশ প্রথমে পিডিএফ ভার্সনে কনভার্ট করে নিতে হবে। এরপর সেই পিডিএফ ফাইল আপলোড করতে হবে সফটওয়্যারে। আপলোডের পর কমান্ড দিলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলায় অনুবাদ হয়ে যাবে ইংরেজিতে দেওয়া রায় বা আদেশটি। অনুবাদে সফটওয়্যারটি পিডিএফ ফাইলের সাইজ অনুযায়ী ১০ থেকে ৩০ মিনিট বা তারও বেশি সময় নিতে পারে বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
যুগান্তকারী পদক্ষেপ : এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, রায় ও আদেশগুলো বাংলায় অনুবাদের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। উচ্চ আদালতের অল্পসংখ্যক বিচারপতি বাংলায় রায় লিখছেন। অধিকাংশ বিচারপতিই ইংরেজিতে রায় দেন। আইনজীবীদেরও ইংরেজি থেকে বাংলায় টার্ন করা সময় সাপেক্ষ। তাই আমরা দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি মাধ্যমের অপেক্ষায় ছিলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। উচ্চ আদালতের অধিকাংশ রায় ও আদেশ ইংরেজিতে দেওয়া হয়। দেশের একটি বড় অংশের মানুষই ইংরেজি বুঝতে পারেন না। সফটওয়্যারটি চালু হলে সাধারণ মানুষ অন্তত নিজের পক্ষে-বিপক্ষে পাওয়া রায় বা আদেশ নিজেই বুঝতে পারবেন।