নাজিবুল কাইয়ুম মানিক
দুটি কাল্পনিক মামলার ঘটনা দিয়ে কিভাবে থানায় এজাহার বা অভিযোগ দায়ের করতে হয়ে তা নিজে শিখার ও অন্যকে শিখানোর চেষ্টা করবো।
১. বরাবর,
অফিসার ইনচার্জ
কবিরপুর মডেল থানা, হাজীপুর।
বিষয়: অভিযোগ প্রসঙ্গে।
জনাব,
যথাবিহীত সম্মান পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আ: কাশেম, পিতা- সাবদেল , সাং- নওদাপাড়া, ইউ:পি: মাওনা, থানা- শ্রীপুর, জেলা- বকুলপুর, বিবাদী ১। মোছা: শেফালী (১৯), পিতা- নূরু, সাং- গাজীপুর, ইউ:পি: শফিপুর, ২। সরুজ (২৪), পিতা- অজ্ঞাত, মাতা- মোছা: হাসনা, সাং- কপাটিয়াপাড়া, ইউ:পি: মাওনা, উভয় থানা- শ্রীপুর, জেলা- গাজীপুরদ্বয়ের বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করিতেছি যে, গত ইং ১৭/০২/২০২০ তারিখে ১নং বিবাদীনির সহিত আমার ছেলে মো: আশাদুল (২২) কে ইসলামি শরা-শরিয়ত মোতাবেক পারিবারিক ভাবে বিবাহ করাই এবং ১নং বিবাদীনিকে নিয়া আমার ছেলে আমাদের বাড়িতেই ঘর-সংসার করিতে শুরু করে। ইং ১২/০৩/২০২০ তারিখ ভোর সকাল অনুমান ০৫.৪৫ ঘটিকার সময় ফজরের আজান হইলে আমার ছেলে ঘুম হইতে জাগিয়া ফজরের নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে মসজিদে চলিয়া যায়। নামাজ শেষে সকাল অনুমান ০৬.৩০ ঘটিকার সময় আমার ছেলে বাড়িতে ঘরে আসিয়া দেখে যে, তাহার স্ত্রী অর্থাৎ ১নং বিবাদীনি ঘরে নেই। পরে আমার ছেলে আমাদেরকে ঘুম থেকে ডাকিয়া জানায় যে, তাহার স্ত্রী ঘরে নেই। পরে আমি ও আমার স্ত্রী- হোরেনা আক্তার, আমার ছেলের বসত ঘরে গিয়া দেখি যে, তাহার ঘরে থাকা সুকেসে রক্ষিত নগদ- ৪৫,০০০/- টাকা নেই এবং বিবাহের সময় ১নং বিবাদীনিকে দেয়া অনুমান ০১ লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকার নেই। পরে আমি বিষয়টি ১নং বিবাদীনির পরিবারের লোকজনদেরকে জানাইলে, তাহাদের পরিবার সহ আমাদের পরিবারের লোকজন, উক্ত ১নং বিবাদীনিকে আমাদের নিকটতম আত্মীয় স্বজন সহ সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করিয়া কোথাও পাই নাই। একপর্যায়ে ১নং বিবাদীনির পিত্রালয়ের এলাকার জনৈক ব্যক্তির নিকট সংবাদ পাই যে, ২নং বিবাদীর সহিত ১নং বিবাদীনির পূর্বে মিলামেশা ছিল। ২নং বিবাদীকে জিজ্ঞাসা করিলে সন্ধ্যান পাওয়া যাইতে পারে। সেই প্রেক্ষিতে আমি আমাদের এলাকার প্রতিবেশী জনৈক বাদল, শাহীন, আমিনুল ও ১নং বিবাদীনির পিত্রালয়ের নিকটতম কয়েকজন আত্মীয়দের নিয়া ইং ০৮/০৩/২০২০ তারিখ সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় ২নং বিবাদীর বাড়িতে যাইয়া তাহাকে বাড়িতে পাইয়া ঐ বাড়ির লোকজনের মোকাবেলায় ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে, সে সকলের সম্মুখে ১নং বিবাদীর সহিত সম্পর্ক ছিল বলিয়া জানায়। সে আরও জানায় যে, ১নং বিবাদীনি আমাদের বাড়ি থেকে যাওয়ার পরও তাহার সহিত ফোনে যোগাযোগ করিতো কিন্তু এখন ১নং বিবাদীনির মোবাইলের সংযোগ বন্ধ থাকায় কথাবার্তা হয় না। ২নং বিবাদী কথার প্রেক্ষিতে আমাদের ধারনা হইতেছে যে, ২নং বিবাদী ১নং বিবাদীনিকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখাইয়া, কু-পরমর্শ দিয়া ফোসলাইয়া ১নং বিবাদীনিকে দিয়া আমার ছেলের ঘর থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়া গিয়াছে এবং ১নং বিবাদীনিকে অজ্ঞাত স্থানে গোপনে রাখিয়াছে। ২নং বিবাদীকে গভীর ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাইতে পারে। ১নং বিবাদীনিকে খোঁজাখুজি করার কারনে এবং তথ্য সংগ্রহের চেষ্টায় থানায় অভিযোগ দায়ের করিতে বিলম্ব হইল। প্রকার যে, আমার ছেলে খুবই সহজ, সরল বিধায় আমি বাদী হইয়া অত্র অভিযোগ দায়ের করিলাম।
২. বরাবর,
অফিসার ইনচার্জ
মদনপুর মডেল থানা, বাজীপুর।
বিষয়: অভিযোগ প্রসঙ্গে।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি দরখাস্তকারী মো: মামাল উদ্দিন, পিতা- মো: মাবুদ শেখ, সাং- সোনাকর, থানা- শ্রীপুর, জেলা- গাজীপুর। বিবাদী ১। জুনায়েদ (৫০) পিতা- অজ্ঞাত, সাং- বান্নতিটেক, ২। মো: রফিকুল (৩৫), পিতা- অজ্ঞাত, সাং- মুখি বেলাবর, উভয় থানা- পাগলা, জেলা- ময়মনসিংহ, ৩। রাফি (৩২) ৪। সনির মিয়া (২৮) উভয় পিতা- খলিল মিয়া, ৫। মোছা: রিনা (৪৫) স্বামী- আ: ইসলাম, ৬। আ: হক (৫০), পিতা- মৃত নিরুজ আলী দপ্তরী, সর্ব সাং- কাওরাইদ, থানা- শ্রীপুর, জেলা- গাজীপুর, ৭। নার্গিস (৩৫), পিতা- খলিল মিয়া (৫৫), স্বামী- ইসমাইল, সাং- বান্নতিটেক, থানা- পাগলা, জেলা- ময়মনসিংহ-গনসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জন বিবাদীদের বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ করিতেছি যে, উক্ত ১নং বিবাদী খলিল মিয়ার মেয়ের জামাতা, ২নং বিবাদী ৬নং বিবাদীর মেয়ের জামাতা এবং অন্যান্য বিবাদীগন আমার আত্মীয় বটে। বিবাদীগন এলাকায় সন্ত্রাসী, দাঙ্গাবাজ, উচ্ছৃঙ্খল ও আইন অমান্যকারী প্রকৃতির লোক হিসাবে পরিচিত। বিবাদীগন দীর্ঘদিন যাবৎ জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়াদী নিয়া আমার সাথে শত্রæতা পোষন করিয়া আমাদেরকে মারপিটসহ খুন জখম করিবে মর্মে প্রকাশ্য ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়া আসিতে থাকে। ঘটনার তারিখ অর্থাৎ ০২/০৩/২০২০ ইং দুপুর অনুমান ০১.০০ ঘটিকার সময় উল্লেখিত বিবাদীগন সহ অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জন বিবাদী পরস্পর যোগসাজসে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ধারালো রাম দা, লাঠি, লোহার রড ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমার বসত বাড়ীতে অনধিকার প্রবেশ করিয়া আমাকে খোঁজাখুজি করে, তখন আমার ছেলে- জাহাঙ্গীর (২২) খোঁজার কারণ জিজ্ঞাসা করা মাত্রই উল্লেখিত বিবাদীগণ আমার ছেলের প্রতি ক্ষিপ্ত হইয়া খুন জখমের উদ্দেশ্যে এলোপাথারী ভাবে মারপিট শুরু করে। যার কারনে আমি বাদী হইয়া বিবাদীদের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করি, যার মামলা নং- ০৯, তাং- ০২/০৩/২০২০ ইং, ধারা- ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৩৮০/৩৫৪/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০। বর্তমানে মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে চলমান আছে। এরই ধারাবাকিতায় ঘটনার তারিখ ০৩/০২/২০২০ ইং সকাল অনুমান ০৭.০০ ঘটিকার সময় উল্লেখিত বিবাদীগণ পূর্ব শত্রæতার আক্রোশে লোহার রড, সাবল, দা, হকি স্টিক, লাঠি-সোঠা ইত্যাদি দেশী অস্ত্র-সস্ত্র নিয়া বেআইনী জনতা বদ্ধে আমার বসত বাড়ীতে অনধিকার প্রবেশ করিয়া আমার স্ত্রী- মোছা: বেবী আক্তারকে বাড়ীর উঠানে পাইয়া অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ সহ এলোপাথারী কিল, ঘুষি, লাথি ও লোহার রড দিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেদরক আঘাত করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে তীব্র ব্যাথাযুক্ত নীলা ফুলা জখম প্রাপ্ত করে। একপর্যায়ে উক্ত ১নং বিবাদীর হাতে থাকা লোহার রড দিয়া আমার স্ত্রীর বাম পায়ের হাটুর নিচে স্ব-জোরে আঘাত করিয়া হাড় ফাঁটা কাটা রক্তাক্ত গুরুতর জখম প্রাপ্ত করে। ৩নং বিবাদী আমার স্ত্রীর চুলের মুঠি ও কাপর চোপর ধরিয়া মাটিতে ফেলিয়া টানা হেচঁড়া করত: শ্লীলতাহানী ঘটায়। তখন আমার স্ত্রীর ডাকচিৎকারে আমি ঘর হইতে বাহির হইয়া আসা মাত্রই বিবাদীগণ আমাকে এলোপাথারী কিল, ঘুষি, লাথি ও লোহার রড দিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেদরক আঘাত করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে তীব্র ব্যাথাযুক্ত নীলা ফুলা জখম প্রাপ্ত করে। ২নং বিবাদীর হাতে থাকা হকি স্টিক দিয়া স্ব-জোরে আমার মাথায় আঘাত করিলে উক্ত আঘাত আমি আমার বাম হাত দিয়া ফিরাইলে লক্ষভ্রষ্ট হইয়া আমার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের হাড় ভাঙ্গিয়া গুরুত্বর জখম প্রাপ্ত হয়। ৪নং বিবাদী আমার বাম পায়ের হাটুতে সাবল দিয়া জোরে আঘাত করিয়া রক্তজমাট গুরুতর জখম করিয়া মাটিতে ফালাইয়া দেয়। ৬নং বিবাদী ঘুষি মারিয়া আমার উপরের পাটির দুই দাঁত লাড়াইয়া ফেলে। ৫ ও ৭ নং বিবাদীদ্বয় আমার স্ত্রীর পড়নের কাপর টানিয়া খোলিয়া নিয়া যায়। ঐ সময় আমাদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন আগাইয়া আসিতে থাকিলে বিবাদীগন খুন জখমের হুমকি দিয়া চলিয়া যায়। পরে স্থানীয় জালাল মৃধা, মো: রফিক লোকজনের সহায়তায় আমাদের ১টি সিএনজি যোগে “শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল”, গাজীপুরে নিয়া গেলে কর্তবরত ডাক্তার আমার স্ত্রীর জখমের চিকিৎসা সহ ভর্তি করেন এবং আমার জখমের চিকিৎসার প্রদান করেন। পরবর্তীতে আমি কিছুটা সুস্থ হইয়া ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনদের অবহিত করিয়া আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য থানায় আসিয়া অত্র অভিযোগ দায়ের করিতে বিলম্ব হয়। ঘটনার বহু স্বাক্ষী প্রমান আছে।
নিবেদক
অভিযোগকারী
মোটকথা আমাদের দেশে হয়রানি ও মিথ্যা মামলা হচ্ছে অহরহ ঠিক এরকমভাবে যেভাবে উপরের দুটি মামলায় কাল্পনিক ঘটনা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। এই দুটি ঘটনা সত্য কি মিথ্যা সেটি বড় নয়, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে কেউ জানি আপনার আমার দ্বারা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে না যায়।
মোঃ নাজিবুল কাইয়ুম মানিক, আইনজীবী।