করোনা মহামারির মতো বিশেষ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা ছাড়াই এসএসসি, এইচএসসি এবং সমমানের ফল প্রকাশে পৃথক তিনটি আইন সংশোধনের লক্ষ্যে সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে। বিল তিনটি পাস হলে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২১, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) বিল-২০২১, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) বিল-২০২১ সংসদে উত্থাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে বিল তিনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিল তিনটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনে বিশেষ পরিস্থিতে অতিমারি, মহামারি, দৈব-দুর্বিপাকের কারণে বা সরকার কর্তৃক সময় নির্ধারিত কোনো অনিবার্য পরিস্থিতিতে পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ এবং সনদ করা সম্ভব না হলে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত আদেশ দ্বারা কোনো বিশেষ বছরে শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা ছাড়াই বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ করে উক্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত পদ্ধতিতে মূল্যায়ন এবং সনদ প্রদানের জন্য নির্দেশাবলি জারি করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২১ উত্থাপন নিয়ে সংসদে আপত্তি জানান জাতীয় পার্টির সিনিয়র সংসদ সদস্য মো. ফখরুল ইমাম। নিয়ম অনুযায়ী সংসদে উত্থাপনের আগে নোটিশ না পাওয়ায় তিনি আপত্তি জানান। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদসচিবের বক্তব্য নিয়েও আপত্তি জানান তিনি। কিন্তু তার আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি উত্থাপন করেন মন্ত্রী।
বিলটি উত্থাপনকালে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত রয়েছে। বিদ্যমান আইনে পরীক্ষাপূর্বক ফলাফল প্রকাশ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারির কারণে আমরা এবার পরীক্ষা নিতে পারিনি। তাই বিশেষ পদ্ধতিতে ফলাফল দিতে চাচ্ছি। এ জন্য আইনটি সংশোধন প্রয়োজন। সংসদ থেকে আইনটি পাস করে দিলেই দ্রুততার সঙ্গে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
উল্লেখ্য, ১১টি শিক্ষা বোর্ডের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থী এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল পয়লা এপ্রিল থেকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে সরকার পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়নের মাধ্যমে এইচএসসি ও সমমান শ্রেণির ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। এ ক্ষেত্রে জেএসসি এবং এসএসসির ফলাফলের গড় করে এইচএসসির ফল নির্ধারণ করার ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু পরীক্ষা ছাড়া ফল প্রকাশে আইনগত জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণে ডিসেম্বরে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। পরে সরকার আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়।