করোনা মহামারি থেকে অর্থনীতি এখনো পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়নি। এর মধ্যেই আগামী অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রাক্কলন করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ব্যবসায়ীদের বিশাল ক্ষতি করেছে। এখনো ধুঁকছে ব্যবসা খাত। তার পরও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে নতুন করে প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা খাত বাড়ানোসহ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে আগামী বাজেট ঘিরে। আবার এতসব আয়োজনের মধ্যেই ব্যয় কমিয়ে আনতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে আসছে বড় ধরনের কাটছাঁট। চলতি বাজেটের ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে। ব্যয়ের সঙ্গে এনবিআরের আয়ও কমানো হচ্ছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। আগামী বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে চলতি এবং আগামী বাজেটের নানা দিক নিয়ে খসড়া ঠিক করতে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠক হবে। বৈঠকে এসব প্রাক্কলন নিয়ে আলোচনা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আপনিও লিখতে পারেন আমাদের ক্যাম্পাস, শিক্ষা পরিবার, সাহিত্য ও মতামত পাতায় । আাপনার লেখার মাধ্যমে দেশ ও জাতি সমৃদ্ধ হোক।
আপনার লেখা পাঠাতে আমাদের ইমেল করুন editor@apsnews24.com এই ঠিকানায়।
লেখার সাথে আপনার পরিচয়, ফোন নাম্বার ও ছবি দিবেন। প্রয়োজনে ফোনও করতে পারেন।
01517856010
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগামী বাজেট প্রণয়নে আমরা বাস্তবতাকে সামনে রাখছি। আগামী বাজেট হবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট। যেহেতু ভ্যাকসিন আমরা পাচ্ছি, তাই আগামী বাজেটে অর্থনীতি আবার স্বমহিমায় ফিরবে বলে আশা করি। এ জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট তৈরির কাজ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে এটি নিয়মমাফিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। বর্তমানে অর্থমন্ত্রী বিদেশে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে তাঁর সামনে আমরা সব কটি বিষয় তুলে ধরব। তিনি যে নির্দেশনা দেবেন সে অনুযায়ী কাজ হবে। তবে বাজেটের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করতে আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’
সূত্র মতে, আগামী অর্থবছরের বাজেট হতে পারে ছয় লাখ কোটি টাকার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেটের আকার ৩২ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে। করোনার কারণে চলতি অর্থবছর রাজস্ব আয়ের অবস্থা ভালো না। সরকার আয় বাড়াতে হন্যে হয়ে নতুন উপায় খুঁজছে। কৃচ্ছ্রসাধনের মতো কঠোর নীতি নিয়েছে। পরিস্থিতি চলমান থাকলে গত অর্থবছরের ৮৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতির রেকর্ড চলতি অর্থবছর শেষে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এত কিছুর পরও অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী বাজেটে এনবিআরকে তিন লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বিশাল টার্গেট দেওয়ার প্রাক্কলন করছে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া আছে। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা বাড়তে পারে ২০ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বিশাল ব্যয় এবং আয়ের বিপরীতে ঘাটতি ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে তা ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
চলতি বাজেটের মতো আগামী অর্থবছরের বাজেটেও করোনাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দুর্যোগ খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ১০ মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন এবং করোনা মোকাবেলার মতো বড় কর্মসূচি থাকবে নতুন বাজেটে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৮৭ লাখ করা হয়েছে। আগামী বাজেটে উপকারভোগীর সংখ্যা এক কোটিতে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। করোনার প্রথম ঢেউ মোকাবেলায় এক লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আরেকটি প্রণোদনার পরিকল্পনা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থ মন্ত্রণালয় এটি নিয়ে বর্তমানে কাজ করছে। নতুন প্রণোদনা ঘোষণা করা হলে বাজেটে পৃথকভাবে বরাদ্দ রাখা হতে পারে। অর্থমন্ত্রী বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা দেবেন।
সংশোধিত বাজেট : প্রতি অর্থবছরেই বিশাল আকারের বাজেট দেওয়া হয়। তারপর অর্থবছরের মাঝামাঝি তা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। সংশোধিত বাজেটে তা ৩০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর ৮৪.৮৫ শতাংশ পিছিয়ে আছে। এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সংশোধিত বাজেটে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে তিন লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা নতুন লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিতে পারে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বরাবরই ভালো। চলতি বাজেটে সরকার ৮.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল। করোনার ধাক্কায় তা কমিয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হতে পারে।