অনেকেরই দিনে দু’বার ব্রাশ করার পরেও দুর্গন্ধ থেকেই যায়। মুখ ঢেকে কথা বলা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। মুখোমুখি কথা বলতে গেলে বিব্রত হতে হয়, হাসতেও পারেন না প্রাণ খুলে
অনেকেই মুখে দুর্গন্ধজনিত সমস্যায় ভোগেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে তো বটেই, সারা দিনই মুখে দুর্গন্ধ হয় অনেকের। ফলে পড়তে হয় অস্বস্তিতে। দিনে দু’বার ব্রাশ করার পরেও দুর্গন্ধ যেন থেকেই যায়। মুখ ঢেকে কথা বলা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। মুখোমুখি কথা বলতে গেলে বিব্রত হতে হয়, হাসতেও পারেন না প্রাণ খুলে।
মুখে গন্ধ কেন হয়:
– প্রতিবার খাওয়ার পর খাবারের ছোট ছোট অংশ দাঁতের ফাঁকে, মাড়ির ভেতরে জমে থেকে “ডেন্টাল প্লাক” সৃষ্টি করে। এর থেকে দেখা দেয় মাড়ির প্রদাহ (পেরিওডেন্টাল ডিজিজ)। ফলে দুর্গন্ধ হতে পারে।
– দাঁতের ফাঁকে ও মুখের ভিতরে খাদ্যকণা ও জীবাণুর অবস্থান, মুখের ভেতর দিকে ছত্রাক ও ফাঙ্গাসের কারণে ঘা (ক্যানডিজিস), মুখের যে কোনো ধরনের ঘা বা ক্ষত, ডেন্টাল সিস্ট বা টিউমার, মুখের ক্যানসার, দুর্ঘটনার কারণে ক্ষত থেকে দুর্গন্ধ হতে পারে।
– দেহের অন্যান্য রোগের কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। যেমন- পেপটিক আলসার বা পরিপাকতন্ত্রের রোগ, কিডনি রোগ, লিভারের রোগ, গলা বা পাকস্থলীর ক্যান্সার, হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভাবস্থা, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ, এইডস, নাক, কান, গলার রোগ ইত্যাদি।
এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের কিছু উপায়:
দিনে অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ: খাবারের কণা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকাটা কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। এটি প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই হয়। আটকে থাকা খাবারে জন্মানো জীবাণু মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। প্রতিবার খাবার খাওয়ার পর বা দিনে অন্তত দু’বার দাঁত মাজা এবং ফ্লস দিয়ে পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
জিভ পরিষ্কার করুন: দাঁত মাজলেই মুখের সব জীবাণু চলে যায় না। প্রতিবার দাঁত মাজার সময় জিভও পরিষ্কার করুন। এতে জিভের ওপর জমা খাবারের কণা দূর হবে।
ধূমপান ছাড়ুন: ধূমপানের কারণে মুখের ভেতর শুকিয়ে যায় এবং মুখের মধ্যে জন্মানো জীবাণুর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ধূমপানের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে। তাই মুখের ক্ষত বা ঘা শুকাতে সময় নেয়। সেক্ষেত্রে মুখে মারাত্মক দুর্গন্ধ হয়।
হজমের সমস্যা দূর করুন: হজমের সমস্যার কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। পেট পরিষ্কার না হলে এই সমস্যা বাড়ে। সেক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে হজমের এনজাইম খেতে পারেন। তাতে হজম ক্ষমতা বাড়বে। পেট পরিষ্কার হবে।
ক্ষত সারান: মুখের ঘা বা ক্ষতর কারণে দুর্গন্ধ হয়। সমস্যা যত দিন থাকবে, মুখের দুর্গন্ধও বাড়তে থাকবে।
লবঙ্গ: লবঙ্গে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ মুখে গন্ধ তৈরি করা ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। মুখে একটি লবঙ্গ নিয়ে চুষতে থাকুন। এটি গন্ধ দূর করতে চমৎকার কাজ করে।
লেবুর রস: মুখে গন্ধের কারণে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলে নিয়মিত লেবুর রস পান করুন। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুর ভেতরে থাকা অ্যাসিডিক উপাদান মুখগহ্বরে বাসা বেঁধে থাকা জীবাণুদের মেরে ফেলে। ফলে দ্রুতই দুর্গন্ধ কমে যায়। এক কাপ পানিতে দুই চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন অথবা সেই পানি দিয়ে ভালো করে কুলকুচি করে ফেলেও দিতে পারেন।
চুইংগাম বা দারুচিনি: মুখের আর্দ্র ভাব বজায় থাকলে দুর্গন্ধ কম হয়। তাই চিনি ছাড়া ক্যান্ডি বা চুইংগাম মুখে রাখতে পারেন। দারুচিনিও এক্ষেত্রে বেশ উপকারী।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: নানা কারণেই মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। তাই উপরোক্ত পদ্ধতিতে সুফল না পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।