আজ ২১ ডিসেম্বর, পৃথিবীর দীর্ঘতম রাত। এ দিন সন্ধ্যায় কয়েকশ’ বছর পর আবার উজ্জ্বল দুটি গ্রহকে একসঙ্গে মিশে যেতে দেখা যাবে।
এ মহাজাগতিক ঘটনা ‘দ্য গ্রেট কনজাংশন অব ২০২০’ নামে পরিচিতি। বছরের সবচেয়ে অন্ধকার এ দিনে বৃহস্পতি ও শনি গ্রহ একসঙ্গে মিলে আসবে, আলো দেবে পৃথিবীকে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একে ‘ক্রিসমাস স্টার’ নামে উল্লেখ করেন, যার ধারণা খ্রিষ্টীয় বাইবেলের স্টার অব বেথলেহেম থেকে নেওয়া। অবশ্য অনেকে বিশ্বাস করেন ২ হাজার আগে বর্ণিত তারকা শুক্র ও বৃহস্পতির যুগলবন্দী ছিল।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসেব বলছে, বৃহস্পতি ও শনিকে এত কাছাকাছি আসতে দেখা গিয়েছিল প্রায় ৮০০ বছর আগে। তার পরে ৪০০ বছর পরে এক বার কাছে এলেও তা পৃথিবী থেকে দেখা যায়নি। সোমবার রাতে ফের ওই দুই গ্রহকে খুব কাছাকাছি দেখতে পাবেন মানুষ।
আজ সূর্যাস্তের পরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিগন্তে দুই গ্রহকে খুব কাছাকাছি দেখা যাবে। যদিও আকাশে খুব কাছাকাছি থাকলেও দুই গ্রহের দূরত্ব ৭৩ কোটি কিলোমিটার। এ সময় টেলিস্কোপে বৃহস্পতির দু-একটি উপগ্রহও দেখা যেতে পারে।
সৌরজগতের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ গ্রহ বৃহস্পতি সূর্যকে প্রায় ১২ বছরে একবার প্রদক্ষিণ করে। আর শনি যেহেতু সূর্য থেকে অনেক বেশি দূরে থাকে তাই তার কক্ষপথের পরিধি বৃহস্পতির কক্ষপথের পরিধির চেয়ে অনেক বেশি। আর তাই সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে তার লাগে প্রায় সাড়ে ২৯ বছর। অর্থাৎ শনি যখন সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ শেষ করে, বৃহস্পতি তখন সূর্যকে দুবার প্রদক্ষিণ করে ফেলেছে। এর ফলে প্রতি ২০ বছর অন্তর বৃহস্পতি শনিকে অতিক্রম করে এগিয়ে যায়।
এ বছর ২১ ডিসেম্বর যখন বৃহস্পতি শনিকে অতিক্রম করবে তখন পৃথিবী থেকে দুটি গ্রহের দূরত্ব হবে ন্যূনতম। সুতরাং তাদের ঔজ্জ্বল্য হবে সব থেকে বেশি। ঠিক এই ধরনের ঘটনা এর আগে ঘটেছিল ১৬২৩ সালের ১৬ জুলাই। কিন্তু তখন পৃথিবীর আকাশে দুটি গ্রহের আপাত অবস্থান ছিল সূর্যের খুব কাছে। তাই তা অনেকেই দেখতে পাননি। শনি ও বৃহস্পতির সঙ্গে পৃথিবী যদি পুরোপুরি একই সরলরেখায় অবস্থান না করে তাহলে শনি বৃহস্পতির পেছনে পুরোপুরি ঢাকা পড়ে না। এবারেও তা হবে না। বরং, শনি ও বৃহস্পতিকে ঠিক গায়ে গায়ে লেগে থাকতে দেখা যাবে। এমনটি শেষবার মানুষ দেখেছিল ১২২৬ সালের ৫ মার্চে।
২০৪০ সালে বৃহস্পতি আবার শনিকে অতিক্রম করবে কিন্তু রাতের আকাশে এই মিলনকে আবার প্রত্যক্ষ করতে অপেক্ষা করতে হবে ২০৮০ সাল পর্যন্ত।