নাজিয়া আমিন
বিবাহের পর স্ত্রী কে ভরণপোষণ প্রদান করা স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক। স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ লাভ করা প্রতিটি স্ত্রীর আইনগত অধিকার। ভরণপোষণ বলতে বোঝায় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও অন্যান্য চাহিদা। অর্থাৎ, বিবাহ হবার সাথে সাথেই এক জন নারীর তার স্বামীর নিকট থেকে ভরণপোষণ লাভ করার অধিকার জন্মায়। আর্থিক বিবেচনায় এর পরিমাণ কত হবে তা কোন আইনে নির্ধারিত নেই। স্বামীর রোজগার, সামাজিক অবস্থান ও অন্যান্য আরও বিষয় বিবেচনা করে এটা নির্ধারণ করতে হয়৷ স্বামী আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছল হলেও স্ত্রীর ভরণপোষণের অধিকারটি নষ্ট হবে না। অর্থাৎ মূল কথা হল, স্ত্রীর দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মেটানো স্বামীর দায়িত্ব এবং যে প্রকারেই হোক না কেন এ দায়িত্ব পালন করতেই হবে।
আমাদের দেশে অনেক সময় দেখা যায় যে, পুরুষেরা এ ভরণপোষণের বিষয়টিকে অবহেলা করেন বা ভরণপোষণের দায়িত্ব থেকে পিছু হটে যান। এমন অবস্থায় স্ত্রী আইনের অধীনে ব্যবস্থা নিতে পারেন। বিষয়টিকে ভালো মত যাচাই-বাছাই করে সমাধান দেয়ার জন্য আমাদের দেশে পারিবারিক আদালত আছে। স্বামী ঠিক মত ভরণপোষণ প্রদান করে না- এ ধরনের অভিযোগের মাধ্যমে এক জন নারী পারিবারিক আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোর্ট ফি হচ্ছে ৩০ টাকা। এছাড়া সালিশি পরিষদেও মামলা দায়েরের সু্যোগ রয়েছে।১৯৬১ সালের পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৯ ধারার বিধান মতে, স্ত্রী তার সমস্যার সরাসরি প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে দরখাস্ত দিতে পারেন এবং সে দরখাস্ত পাওয়ার পর চেয়ারম্যান সালিশি পরিষদ গঠন করবেন।
অনেকে হয়ত এটা জানেন না যে,কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্ত্রী তার স্বামীর বাড়িতে বসবাস না করলেও ভরণপোষণের বিষয়টি থেকে যায়। স্ত্রী যদি অত্যাচারিত হয়ে বাসা ত্যাগ করে তবে সেক্ষেত্রে ও স্বামী ভরণপোষণ প্রদান করবেন। তালাকের ক্ষেত্রে তালাকের নোটিশ প্রদান করার পরও তিন মাস পর্যন্ত স্ত্রী ভরণপোষণ পাবার অধিকারী যেহেতু নোটিশ পাবার তিন মাস পর তালাকটি কার্যকর হয়।
বিয়ের পর স্ত্রীকে ভরণপোষণ না দেয়া অবশ্যই অনেক বড় অপরাধ। এর বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় মামলাই করা যায়।
লেখকঃ নাজিয়া আমিন, আইনজীবী, ইমেইল – aminnazia@gmail.com