এপিএস নিউজ ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় চীনের উহানের স্টাইলে রাতারাতি একটি হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেয় আকিজ গ্রুপ। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নিজস্ব জায়গায় হাসপাতালের কাজ শুরুও করে গ্রুপটি। তবে স্থানীয়দের বাধার মুখে দুই দিন ধরে বন্ধ আছে হাসপাতালের কাজ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় পড়েছে উদ্যোগটি।
জানা যায়, এলাকায় করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় গত শনিবার কাজ বন্ধ করে দেয় এলাকাবাসী। হামলা চালিয়ে পেটানো হয় সিকিউরিটি গার্ড ও শ্রমিকদের। স্থানীয় কাউন্সিলর শফিউল্লাহ শফি’র ইন্ধনে কয়েকশ মানুষ জড়ো হয়ে এই ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে পুলিশ, র্যাব ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এসময় কাজ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
ওইদিন রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন আকিজ গ্রুপের কর্তাব্যক্তিরা। পরদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাজ শুরু হবে বলে গণমাধ্যমকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, রবিবার সকালে হাসপাতাল তৈরির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এটি আবেদন করে আকিজ গ্রুপ। আবেদনপত্রে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য তেজগাঁওয়ে আকিজ গ্রুপের নিজস্ব জায়গায় একটি অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরে দেশের সর্বোচ্চ করদাতা প্রতিষ্ঠানটি। বলা হয়, দেশে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা এখন তুলনামূলক কম। আইইসিডিআর এবং কয়েকটি হাসপাতালে রোগটি নির্ণয়ের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদি রোগীর সংখ্যা বাড়ে তাহলে সরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাবে। এজন্য আকিজ গ্রুপ ৩০০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে ১৬টি আইসিইউ, ২৫টি আইসোলেশন বেডসহ চারটি ওয়ার্ডে পুরুষ-মহিলাদের ২৫৯টি বেডের ব্যবস্থা করা থাকবে।
সূত্র জানায়, আবেদনপত্রটি জমা দিতে গেলে মন্ত্রণালয় সেটা রিসিভ করেনি। বলা হয় অনলাইনে আবেদন করতে। কিন্তু দুই দিনেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কিছু জানানো হয়নি।
এবিষয়ে কথা বলতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবকে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, দেশের করোনা রোগী আক্রান্তের সংখ্যা তিন দিন ধরে কম। যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের বেশির ভাগই ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে গেছেন। সরকারি যেসব হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে সেখানেই রোগী পাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে নতুন করে বেসরকারি কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর সরকার প্রত্যাশা করছে, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হবে না।
তবে কোনো কারণে পরিস্থিতি জটিলতার দিকে গেলে দ্রুতগতিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে হাসপাতালটি হতেও পারে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র।
যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কাজ বন্ধ আছে বা তারা আমাদের এখানে আবেদন করেছে এমনটি আমার জানা নেই। পত্রপত্রিকাতে দেখলাম স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আবার কাজ চলবে। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো, তাদের আবেদনের অগ্রগতি কতটুকু এবং আমি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো।’
আকিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান শেখ নাসির উদ্দিন এখনো হাসপাতালটি হবে বলে আশা করছেন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কাজ বন্ধ আছে। দোয়া করেন দ্রুত যেন হাসপাতালটির কাজ শুরু করতে পারি।’
এর আগে তেজগাঁওয়ে নিজেদের সবচেয়ে বড় ওয়্যার হাউজটি বন্ধ করে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল তৈরির ঘোষণা দেয় আকিজ গ্রুপ। সেখানে থাকা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, মালামাল সরিয়ে জায়গাটি পরিষ্কার করা হয়। প্রস্তুতি চলছিল চীনের উহান শহরের মতো অস্থায়ী আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের কাজ। দেশের গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল থেকে করোনা পরীক্ষার কিট সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল তাদের। কারণ, দেশেই যখন সরকার কিট তৈরির অনুমতি দিয়েছে, তাই গণস্বাস্থ্যের কাছ থেকে কিট কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। যাতে সহজেই যে কেউ বিনামূল্যে হাসপাতালটিতে এসে করোনা পরীক্ষা করাতে পারে।
হাসপাতালে করোনা আক্রান্তরা চিকিৎসা নিলে স্থানীয়দের মধ্যে করোনা সংক্রমণ হবে এমন গুজবে হামলা করা হয় অস্থায়ী এই হাসপাতালে। কিন্তু স্থানীয়দের এমন শঙ্কা ভুল ছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছ থেকে মতামতও নিয়েছিল আকিজ কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (উইচ) নিয়ম মেনেই সেখানে আধুনিক মানের হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছিল বলে জানিয়েছিল তারা।
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।