এই যে এখন এতো আবেগ এতো ভালোবাসা উতলিয়ে দিচ্ছেন, শিক্ষা ব্যাবস্থা কে ধুয়ে দিচ্ছেন, এটা বলছেন সেটা বলছেন, কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন, এই অবস্থার জন্য কে দায়ী? আমাদের সমস্যা কি জানেন? আমরা দাত থাকিতে দাতের মর্যাদা বুঝিনা। ছেলেটা কি করেছে না করেছে সে সম্পর্কে একটু পরেই বলি, তার পূর্বে পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে বলা প্রয়োজন।
পাইলটের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। সালটি ছিলো ২০১৩, এসএসসি ফলাফল প্রাকাশের পর খুব হতাশ হয়েই বাড়ি ফিরতেছিলাম, আমি যে একা তা নয়। আমার সহপাঠী রোল এক থেকে পাচ পর্যন্ত সবাই হাতাশ। কেও গোল্ডেন তো দূরের কথা প্লাসের মুখটাও দেখতে পারে নাই। কি করে মানুষ কে মুখ দেখাবো? বাসায় আসার পর আমার মা একটু সমবেদনা পাবার আশায় পাশের ঘরের আন্টির রুমে ছুটে গেলো। আন্টি আগে থেকেই আমাদের সম্পর্কে অবগত। কিন্তু আন্টির মেয়ের মুখে শুনতে পেলাম, “ওর সাথে কি স্যারের কোন শত্রুতা আছে। খাতায় লিখলে আবার নাম্বার দিবে না!” সাথে সাথে আন্টিও বলে উঠলো, “তাইতো, আপনার ছেলে লেখা পড়া না করেই + পেয়ে যাবে!…. ইত্যাদি ইত্যাদি। ” অন্যান্য কিছু বক্তব্য- “এতো না ভালো ছাত্র শুনেছিলাম, ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পায়, এইটে বৃত্তি পায়, এবার কি হল! ছোট বেলায় অমন কেরামতি অনেকেই দেখিয়েই থাকে…।” কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! আজ সেই আন্টির একমাত্র ট্যালেন্ট ছেলেটিও যে কিনা বুয়েট ছাড়া পরার কথা চিন্তাই করতে পারতো না, সে আজ বুয়েটে পড়া তো দূরে থাক, বুয়েটের ফ্রম তোলার যোগ্যতাও অর্জন করতে ব্যার্থ।
এবার আসি আত্মহত্যা নিয়ে _ আমি আত্মহত্যার পক্ষে কোন যুক্তিই আনতে চাই না, বরং এই পরিনতির জন্য সমাজের এই সকল ঘৃন্য মানুষদের ধিক্কার জানাই। ধিক্কার যে শুধু এই সকল মানুষদের প্রতি তা নয়, ধিক্কার সেই সকল শিক্ষা গুরুদেরও। কেননা, যেই ছেলে অথাবা মেয়েটি ১৫০/২৫০ জন প্রতিযোগির মধ্যে প্রথম সাড়িতে থাকার যোগ্যতা রাখে কিন্তু ক্লাসের ৬৫ জন + পেলেও রোল এক কিমবা দুই সেই যোগ্যতা রাখেনা। কেমন ছাত্রদের আপনারা প্রথম সারির রোল প্রদান করেন, যেখানে রোল ৫০ বা তার পরবর্তী কেও এ+ পায় অথচ রোল এক বা তার আশে পাশের কেও পায়না। অথচ এই ছেলেটাই/ মেয়েটাই তো ২মাস আগের টেস্ট পরিক্ষায় গোল্ডেন পেয়েছিলো?
এরপর আসি পিতা মাতার বিষয়ে। একটি শিশু তার প্রথম শিক্ষাটা তার পরিবারের কাছ থেকে পায়। আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলাম, যেখানে আত্মহত্যাকারীর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। নিজের ছেলেকে কতটা পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন সেটাও দেখবার বিষয়! ছেলে এ+ পেলে তাকে অ্যাপল ব্রেন্ডের মোবাইল বা সুজুকি বাইক কিনে দিবেন বলে কথা দিয়ে রেখেছেন, কিন্তু ১৫বছরের উর্ধে বয়ষ্ক ছেলেকে/মেয়েকে কতটুকু পারিবারিক শিক্ষা দিয়েছেন সেটাও ভাববার বিষয়! ছেলেটি হয়তো তার আবেগের বশবর্তী হয়ে এই ঘৃন্য কাজ করে ফেলেছে, কিন্তু এটা রোধ করার জন্য আপনি আমি আমাদের সমাজ ও শিক্ষা ব্যাবস্থা কতটা সচেতন? প্রতি বছর রেজাল্ট দেওয়ার পর এমন ঘটনার প্রতিফলন কি একবারই ঘটে? আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়, মানুষের যদি কোন বড় ও মহৎ গুন থাকে তো সেটি ধ্যৈর্য। আর সব থেকে বড় পাওয়া হল জীবন। তুমি আত্মহত্যা করে কি বেচে গেলে? তোমার ইহকাল পরকাল উভয় প্রান্তেই রয়ে গেলো আধার। আর যদি বেচে থাকতে তাহলে তোমার জন্য রয়ে যেতো অপার সম্ভাবনা। জিপিএ ফাইভ থাকলেই যে তুমি হয়তো দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের বাড়ান্দা পাড়াবে বা ভালো চাকরি করবে এমনটা নয়। তোমার চারপাশটা একবার লক্ষ করে দেখ। শত মূর্খের দলই কিন্তু এই বিশাল মেধার ভান্ডারকে নাকের ডগায় রশি দিয়ে ঘুরপাক খাওয়াচ্ছে।
আমার সহপাঠিদের কথাই বলি যারা হয়তো কেও এ+ পাইনি, কিন্তু দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশব্বিদ্যালয় হতে ভালো সাবজেক্ট নিয়ে স্নাতক সমাপ্ত করার একেবারে শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে আছি। তুমি কি পারো না পারো সেটা তোমার মাঝেই পুজি করে রাখনা। বন্ধু বান্ধব পাড়া প্রতিবেশী এটা বলবে সেটা বলবে বলতে থাক। সময় তোমারও তো একদিন আসবে। সেই দিনটার জন্য অপেক্ষা না করে এভাবে কাপুরুষের মত চলে যেতে হবে?লেখকঃ নাঈম শাহরিয়ার শিক্ষার্থী- আইন(অনার্স) বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশব্বিদ্যালয়।