এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই এখনও ছাপাই হয়নি। সবে পাঠ্যবই ছাপার দরপত্রের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। গত ৩১ মে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী এতে উত্তীর্ণ হয়েছে। তারাই উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলেই প্রয়োজন পড়বে পাঠ্যবইয়ের। আগের বছরগুলোতে জুনের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই ছেপে বাজারজাত করা হয়েছে। আর ১ জুলাই কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়।
পাঠ্যবই ছাপা না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা সোমবার বলেন, বই ছাপানোর জন্য আমরা এখন দরপত্র তৈরি করছি। এবার যেহেতু জুলাইয়ের প্রথম দিনে ক্লাস শুরু হচ্ছে না, তাই আমরা একটু ধীরেসুস্থে কাজ শুরু করেছি।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেওয়া হলেও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যবই কিনে পড়তে হয়। এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, ১৬ লাখ ৯০ হাজার শিক্ষার্থী পাস করায় এ বছর অন্তত ২২ লাখ পাঠ্যবই ছাপানো হবে। অভিভাবকরা বলছেন, বই চূড়ান্ত না হওয়ায় ঘরে বসে থাকা শিক্ষার্থীরা অলস সময় পার করছে।
কলেজের ভর্তি পিছিয়ে গেলেও বাজারে বই থাকলে তা কিনে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে পড়তে পারত। এখন সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা জানান, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে এই শ্রেণির বইগুলো বাজারে নকল হয়। এনসিটিবির বাংলা ও ইংরেজি বই বাজারে আসতে দেরি হলে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে নকল বইয়ে বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের চড়া মূল্যে নকল বই কিনতে হতে পারে। আর এর দায় এনসিটিবিকেই নিতে হবে।
জানা গেছে, একাদশ শ্রেণিতে বিষয় বেশি হওয়ায় সব বই বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওইসব বইয়ের পাণ্ডুলিপি এনসিটিবি অনুমোদন করে থাকে। প্রকাশকরাই তা বের করেন। আর বাংলা, বাংলা সহপাঠ আর ইংরেজি পাঠ্যবই এনসিটিবি দরপত্র আহ্বান করে রয়্যালিটির বিনিময়ে প্রকাশকদের বিক্রি করার অনুমতি দিয়ে থাকে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, এ তিনটি বই ছাড়াও এ বছর আইসিটি বিষয়ের বইও এনসিটিবি থেকে দেওয়া হবে। বইটি বর্তমানে লেখার কাজ চলছে। এ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৪টি বই এনসিটিবি নিজে প্রকাশ করবে।
পুস্তক প্রকাশকরা জানান, গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের জন্য ২৪টি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হলেও কেবল একটি প্যাকেজের অধীনে দুটি দরপত্র জমা পড়ে। এনসিটিবি গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকের পুরো বই ‘অগ্রণী প্রিন্টার্স’ নামের একটিমাত্র প্রতিষ্ঠানকে বাজারজাত করার দায়িত্ব দেয়। এ নিয়ে প্রকাশকরা প্রতিবাদ জানান। গত বছর বইয়ের মান নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছিল। এসব কারণে এ বছর এনসিটিবি একটু বুঝেশুনে দরপত্র আহ্বান করতে চাইছে।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, সমিতি থেকে আমরা চাই গতবারের মতো কোনো অসম প্রতিযোগিতা যেন না হয়। কারণ বইগুলোর বাজারজাতকরণের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই সারাদেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে যাতে সময়মতো বইটি যায়। আর আমাদের সমিতির সদস্য সারাদেশের ২৬ হাজার লাইব্রেরি সেই কাজটি করে থাকে। বেশি রয়্যালিটি দিলেই তাকে বাজারজাতকরণের দায়িত্ব দিতে হবে- এনসিটিবির এই নীতির কারণে বইয়ের গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে শিক্ষার্থীদের বই কিনতে হবে। এসব অরাজকতা আমরা সমিতি থেকে চাই না। আমরা চাই এনসিটিবি সবাইকে ডেকে নিয়ে সুষ্ঠু দরপত্রের মাধ্যমে বাজারজাতকরণের কাজ দিক।
এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের বই বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে সরকার যেন লাভবান হয় আমরা সেই কাজটিই করব। এসব বিষয়ে আমরা সরকারের কেন্দ্রীয় ক্রয়সংক্রান্ত সংস্থার (সিপিটিইউ) পরামর্শ নিচ্ছি।
এদিকে, উচ্চ মাধ্যমিকের ভর্তি ও ক্লাস শুরুর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের কলেজে ভর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। এ কারণে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা এখনও হয়নি। কলেজের ভর্তি ও এইচএসসি পরীক্ষা- এ দুটিই বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর সঙ্গে জড়িত বিশালসংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যকে আমরা ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না। কাজেই এ মুহূর্তে কোনোভাবেই আমরা বলতে পারছি না যে এইচএসসি পরীক্ষা কবে হবে। যখন পরীক্ষা নেওয়ার মতো স্বাস্থ্যঝুঁকিবিহীন পরিবেশ তৈরি হলেই এটা সম্পন্ন হবে।
এপিএস/২৩জুন/পিটিআই