শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বাইরে চলাফেরার সময় এবং কর্মক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু চোখে চশমা পরা সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়, যদিও চোখের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। সে জন্য হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সদের পুরো চোখ-ঢাকা চশমা পরতে হয়। কারণ, তাঁরা সর্বক্ষণ করোনা রোগীদের কাছে থাকেন, চিকিৎসাসেবা দেন। তাই বেশি সতর্কতা দরকার। সর্বক্ষণ করোনা রোগীদের নিয়ে কাজ করার সময় সবাই পিপিই (পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) পরেন, সেই সঙ্গে থাকে বিশেষ চশমা। কিন্তু যাঁরা জনে জনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে জরুরি কাজে বাইরে যান, জনসমাগম বেশি, এমন এলাকা এড়িয়ে চলেন, তাঁদের চোখে চশমা পরার প্রয়োজন কম। চক্ষুবিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন, করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রের কোষগুলোকে আক্রান্ত করে, তবে চোখের মাধ্যমেও করোনা ছড়াতে পারে। কিন্তু এই ঝুঁকি কতটা, সে বিষয়ে এখনো খুব বেশি গবেষণা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ গবেষণার ফলাফল জানা গেলে চোখে সব সময় চশমা পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনিয়র অধ্যাপক চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চক্ষু গোলকের বাইরের দিকের সাদা অংশ, স্ক্লেরা (sclera) করোনাভাইরাসকে বাধা দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংক্রমিত চোখের পানি নেত্রনালি দিয়ে নাকে চলে যেতে পারে। এভাবে চোখের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ ঘটতে পারে। উহানে এ রকম রোগী দু-একজন পাওয়া গেছে। কিন্তু এ ধরনের সংক্রমণের হার কতটা, সে বিষয়ে আরও গবেষণা দরকার। তাই সব সময় চশমা পরার বিষয়ে সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত জানতে আমাদের হয়তো কিছু সময় লাগবে। আপাতত আমরা মাস্কের ওপরই জোর দিচ্ছি।’
কীভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেব
মাস্ক পরে বেশিক্ষণ চলাফেরা বা কাজকর্ম করলে দমবন্ধ অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়। বিশেষভাবে যাঁরা সারাদিন অফিসে একটানা কাজ করেন, তাঁদের সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকা কঠিন। এ অবস্থায় মাঝেমধ্যে যখন কাছাকাছি অন্য সহকর্মী বা ব্যক্তি থাকেন না, তখন কাজের ফাঁকে জানালার পাশে গিয়ে মাস্ক খুলে বুক ভরে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারেন। এর ফলে রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি কমবে। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা সাধারণত শ্বাসপ্রশ্বাসের যথাযথ নিয়ম সব সময় মেনে চলি না। এখানে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।
‘ব্রেথ: দ্য নিউ সায়েন্স অব আ লস্ট আর্ট’ বইয়ের লেখক জেমস নেস্টর (James Nestor) সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে লিখেছেন, ‘আমরা কীভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিই, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রতি এখন বেশি নজর দিতে হবে।’ তিনি বলেন, সব সময় নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। কারণ, দীর্ঘ নাসিকানালির মধ্য দিয়ে বাইরের বাতাস যাওয়ার সময় পরিশোধিত হয়, শরীরের তাপমাত্রায় উন্নীত হয় এবং প্রয়োজনীয় হরমোন ও নাইট্রিক অক্সাইড নিঃসৃত করে আমাদের উজ্জীবিত করে। এগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদনে সাহায্য করে। আমরা প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজারবার শ্বাসপ্রশ্বাস নিই। বর্ণিত নিয়ম মেনে প্রতিবার বুক ভরে শ্বাস নিলে আমরা শরীর সুস্থ রাখতে পারি। এ বিষয়ে বিস্তৃত জানতে পড়ুন জেইন ই ব্রডির (Jane E. Brody) ‘লুকিং অ্যাট মাস্কস অ্যান্ড রেসপিরেটরি হেলথ’ নিবন্ধটি (১৫ জুন ২০২০ দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত, ১৭ জুন অনলাইনে আপডেট)।
শরীরের যত্ন নিতে হবে
করোনার এই দুঃসময়ে আমাদের অনেক বেশি সময় বাসায় থাকতে হয়। ফলে ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওজন সামান্য কমাতে পারলেও বিরাট উপকার পাওয়া যাবে। এ জন্য খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার বেশি রাখা দরকার। কারণ, এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফোলা বা প্রদাহ বন্ধে সুফল পাওয়া যায়। এ জন্য উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবার না খেয়ে ফলমূল, শাকসবজি বেশি খেতে হবে। ভাত তো অবশ্যই পরিমাণমতো থাকবে। সি ভিটামিন ও জিংকসমৃদ্ধ খাবার বেশি দরকার।
আব্দুল কাইয়ুম: মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
quayum.abdul@prothomalo.com