১৯৭১ সালে মাত্র ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। এর পরের বছর প্রথম ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। সেই বাংলাদেশ এখন অনেক দূর এগিয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার ৪৯ বছরের ব্যবধানে ৭২২ গুণের চেয়েও বেশি বড় বাজেট আসছে এবার। জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি হবে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় বাজেট উপস্থাপন।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদন হবে এবং পরে ওই প্রস্তাবে সই করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) দুর্যোগের মধ্যেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা সামনে রেখে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের এই বাজেটের আকার হবে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বেশি। শতাংশ হিসাবে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রথম (১৯৭২-৭৩) অর্থবছরে ওই বাজেট দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও তখন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদ। পরের দুটি বাজেটও দিয়েছিলেন তিনি।
এর ৪৭ বছর পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের ৪৮তম যে বাজেট দেবেন তার আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে স্বাধীনতার পর প্রথম বাজেটের চেয়ে নতুন বাজেটের আকার বেড়ে দাঁড়াবে ৭২২ দশমিক ৬৪ গুণ বেশি।
এদিকে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বাজেট দেবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে একাধারে ১০বার বাজেট দিয়ে রেকর্ড করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর আগে বাংলাদেশে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া টানা ছয়টি বাজেট দেন। তবে আবদুল মুহিত ওই টানা ১০টি বাজেট ছাড়াও এরশাদ সরকারের সময় (১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর) দুটি বাজেট দিয়েছিলেন। এ হিসেবে মুহিতের স্থাপনকারী বাজেটের সংখ্যা ১২টি। এ ছাড়া প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানেরও ১২টি বাজেট দেয়ার রেকর্ড রয়েছে।
স্বাধীনতার পর বাজেটের তালিকা নিচে দেয়া হলো-
অর্থবছর — বাজেট উপস্থাপন— বাজেটের আকার
১৯৭২-৭৩ তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকা।
১৯৭৩-৭৪ তাজউদ্দীন আহমদ ৯৯৫ কোটি টাকা।
১৯৭৪-৭৫ তাজউদ্দীন আহমদ ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকা।
১৯৭৫-৭৬ ড. আজিজুর রহমান ১৫৪৯.১৯ কোটি টাকা।
১৯৭৬-৭৭ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা।
১৯৭৭-৭৮ লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান ২১৮৪ কোটি টাকা।
১৯৭৮-৭৯ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২৪৯৯ কোটি টাকা।
১৯৭৯-৮০ ড. এম এন হুদা ৩৩১৭ কোটি টাকা।
১৯৮০-৮১ এম সাইফুর রহমান ৪১০৮ কোটি টাকা।
১৯৮১-৮২ এম সাইফুর রহমান ৪৬৭৭ কোটি টাকা।
১৯৮২-৮৩ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪৭৩৮ কোটি টাকা।
১৯৮৩-৮৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫৮৯৬ কোটি টাকা।
১৯৮৪-৮৫ এম সাইদুজ্জামান ৬৬৯৯ কোটি টাকা।
১৯৮৫-৮৬ এম সাইদুজ্জামান ৭১৩৮ কোটি টাকা।
১৯৮৬-৮৭ এম সাইদুজ্জামান ৮৫০৪ কোটি টাকা।
১৯৮৭-৮৮ এম সাইদুজ্জামান ৮৫২৭ কোটি টাকা।
১৯৮৮-৮৯ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১০৫৬৫ কোটি টাকা।
১৯৮৯-৯০ ড. ওয়াহিদুল হক ১২৭০৩ কোটি টাকা।
১৯৯০-৯১ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১২৯৬০ কোটি টাকা।
১৯৯১-’৯২ এম সাইফুর রহমান ১৫৫৮৪ কোটি টাকা।
১৯৯২-৯৩ এম সাইফুর রহমান ১৭৬০৭ কোটি টাকা।
১৯৯৩-৯৪ এম সাইফুর রহমান ১৯০৫০ কোটি টাকা।
১৯৯৪-৯৫ এম সাইফুর রহমান ২০৯৪৮ কোটি টাকা।
১৯৯৫-৯৬ এম সাইফুর রহমান ২৩১৭০ কোটি টাকা
১৯৯৬-৯৭ এসএএমএস কিবরিয়া ২৪৬০৩ কোটি টাকা
১৯৯৭-৯৮ এসএএমএস কিবরিয়া ২৭৭৮৬ কোটি টাকা
১৯৯৮-৯৯ এসএএমএস কিবরিয়া ২৯৫৩৭ কোটি টাকা
১৯৯৯-০০ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৪২৫২ কোটি টাকা
২০০০-০১ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৮৫২৪ কোটি টাকা
২০০১-০২ এসএএমএস কিবরিয়া ৪২৩০৬ কোটি টাকা
২০০২-০৩ এম সাইফুর রহমান ৪৪৮৫৪ কোটি টাকা
২০০৩-০৪ এম সাইফুর রহমান ৫১৯৮০ কোটি টাকা
২০০৪-০৫ এম সাইফুর রহমান ৫৭২৪৮ কোটি টাকা
২০০৫-০৬ এম সাইফুর রহমান ৬১০৫৮ কোটি টাকা
২০০৬-০৭ এম সাইফুর রহমান ৬৯৭৪০ কোটি টাকা
২০০৭-০৮ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা
২০০৮-০৯ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা
২০০৯-১০ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১১৩,৮১৫ কোটি টাকা
২০১০-১১ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৩২,১৭০ কোটি টাকা
২০১১-১২ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৬৫,০০০ কোটি টাকা
২০১২-১৩ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা।
২০১৩-১৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।
২০১৪-১৫ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।
২০১৫-১৬ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
২০১৬-১৭ আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
২০১৭-১৮ আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকা।
২০১৮-১৯ আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
২০১৯-২০ আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।