অনেক অফিস করোনার সময়টায় কর্মীদের ঘরে বসেই কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। বাসায় শুয়ে-বসে কাজ করলে ঘাড় ও কোমর ব্যথায় ভুগতে পারেন। ব্যথা থেকে বাঁচতে পরামর্শ দিয়েছেন যশোর মেডিকেল কলেজের বাত, ব্যথা ও পূনর্বাসন বিশেষজ্ঞ ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন। লিখেছেন আতিফ আতাউর
হোম অফিসে ডেস্কের সামনে সটান বসে কাজ করার দরকার পড়ে না। তাই বলে যেনতেনভাবে ঘরে বসে অফিসের কাজ করতে যাওয়াটাও ঠিক না। অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে ডেস্কে কাজ করতেন। এখন একটু আয়েশ করে নিজের বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে শুয়ে-বসে কাজ করেন। কাজের ক্ষেত্রে ডেস্কটপকেও এখন হার মানায় অনেক স্মার্টফোন। অফিসের ছোটখাটো অ্যাসাইনমেন্ট, আইডিয়া, প্ল্যানিং বিছানায় শুয়েই স্মার্টফোনে করে পাঠালেন। এতে হয়তো সাময়িক আরাম পাবেন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে কুফলটাই বেশি। এভাবে দিনের পর দিন কাজ করলে ক্রমেই ঘাড় ও কোমর ব্যথায় ভুগতে পারেন। এটা থেকে বাঁচতে যথাসম্ভব নিয়ম মেনে বাসায় অফিসের কাজ করা উচিত। চেষ্টা করুন আগের মতো অফিস রুটিনটাই মেনে চলতে। এতে সব স্বাভাবিক হওয়ার পর আবার অফিসে যোগদান করতে নতুন করে অভ্যস্ত হতে হবে না। তেমনি শারীরিকভাবেও ভালো থাকবেন। ব্যথা থেকে বাঁচতে ঘুম খুব জরুরী। আগে যে সময় ঘুম থেকে উঠতেন, সেই সময়েই উঠুন। অফিস নেই বলে ঘুমের রুটিনের বারোটা বাজানো চলবে না। বাসায় অফিসের কাজের সময় একটানা বসে থাকবেন না। ছোট ছোট বিরতি নিন। আধাঘণ্টা পর পর একটু হেঁটে আসুন অথবা পরিবারে সময় দিন। কাজের ফাঁকে বিরতি নিন, হালকা ব্যায়াম করুন।
হোম অফিস বলে অফিসটাকে বাসায়ও টেনে আনার দরকার নেই। বরং বাসায় হোম অফিস করার সময় প্রিয়জনদের ফোন করতে পারেন, বাসার কাজ করতে পারেন। এতেও সময়টা ভালো কাটবে। আলাদা অ্যানার্জি পাবেন।
হোম অফিসে আপনি কিন্তু আপনার বস। সুতরাং নিয়ম ভঙ্গ করবেন না। সময়মতো কাজ শেষ করুন। পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করতে হবে। কাজের ফাঁকে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ঘুমানোর বিছানাকে কাজের জায়গা বানাবেন না। চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করুন। দীর্ঘ সময় টানা বসে কাজ করলে ঘাড় ও কোমর ব্যথা হতে পারে। এ জন্য কিছু সময় দাঁড়িয়েও কাজ করতে পারেন। এতে শরীরের রক্ত চলাচল বাড়বে। অবসাদ দূর হবে। আপনি যে ধরনের চেয়ারে বসে আরাম বোধ করেন, সে রকম একটি চেয়ার কাজের জন্য বেছে নিন। পাশেই একটি আরামদায়ক কেদারা রাখতে পারেন, যেখানে বসে ফোনে অফিসের মিটিং সারতে পারেন। চাইলে হাঁটতে হাঁটতেও ফোনালাপ সারতে পারেন। মনে রাখতে হবে, ঘরে বসে কাজ আরামদায়ক হলেও কিছু জটিলতা আছে। আগের মতো হাঁটাহাঁটি নেই, সিঁড়ি ব্যবহারও কম। এর প্রভাব পড়ে শরীরের পেশিতে। দিনের পর দিন ঘরে থেকে ঘাড় ও কোমর ব্যথা শুরু হয়। এ জন্য দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করুন। এতে পেশি সচল থাকবে। ঘাড় ও কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন। ঘাড়ের জন্য উপকারী ব্যায়াম করতে পারেন। প্রথমে সোজা দাঁড়িয়ে বা বসে ঘাড় পেছনে নিয়ে ছাদের দিকে তাকান। এরপর ঘাড় ঝুঁকিয়ে তাকান মেঝের দিকে। পর্যায়ক্রমে ডান দিকে ও বাঁ দিকে তাকাবেন। এই ব্যায়াম ঘাড়কে সচল রাখে। এ ছাড়া বাঁ হাত দিয়ে মাথা ডান দিকে ঠেলুন, মাথা সোজা থাকবে। এবার ডান হাতের চাপে মাথা বাঁ দিকে ঠেলার চেষ্টা করুন। এ ক্ষেত্রেও মাথা সোজা থাকবে। মাথার পেছনে দুই হাত জড়ো করে মাথা সামনে ঠেলুন। মাথা সোজা থাকে যেন। কপালে দুই হাত রেখে মাথা পেছনে ঠেলবেন। নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামও ঘাড় ও কোমড় ব্যথায় উপকারী। এছাড়া ভিটামিন ‘ডি’র অভাবেও ঘাড় ও কোমরে ব্যথা হতে পারে। এ জন্য রোদ পোহানোর পাশাপাশি ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার রাখুন খাদ্যতালিকায়। সূত্রঃ কালের কন্ঠ।
এপিএস/৮জুন/পিটিআই