প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে কী কী উপসর্গ দেখা দেয়, এ সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা একাধিকবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে উপসর্গ এক না হওয়ার কারণে ব্যাখ্যা করেনি কেউ। সম্প্রতি ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, নারী-পুরুষ ও বয়সের ভেদে করোনা সংক্রমণের উপসর্গও ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ক গবেষণাটি ‘দ্য ল্যানসেট ডিজিটাল হেলথ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
গবেষণাটি করে কিংস কলেজ অব লন্ডনের গবেষকরা। তারা জেডওই কভিড নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে এ তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। গবেষণায় কাশি, ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়া, তলপেটে ব্যথা ও পায়ের তালুতে ফোসকা পড়ার মতো উপসর্গ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়, ‘সার্স কভ-২ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর আলাদা আলাদা ব্যক্তির কী ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, তাই ছিল এ গবেষণার প্রতিপাদ্য বিষয়। এ ক্ষেত্রে আমরা বয়স, লৈঙ্গিক পরিচয়, অঞ্চলভিত্তিক টিকা দেওয়ার হারকে বিবেচনায় এনেছি। ’
কিংস কলেজের গবেষণা বলছে, যাদের বয়স ৬০-এর ঊর্ধ্বে তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমিত হওয়ার পর ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য নয়। আশির বেশি যাদের বয়স তাদের এ উপসর্গ দেখা যায় না। কিন্তু এ বয়সীদের ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। আর যাদের বয়স ৪০ থেকে ৫৯, তাদের কাশি দেখা দেয় বেশি।
বয়স্কদের যেমন তীব্র ঠাণ্ডা অনুভূতি হয়, এদের ক্ষেত্রে তা হয় না। ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের মধ্যে বুকে ও পেশিতে ব্যথা, শ্বাস নিতে সমস্যা এবং ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়ার উপসর্গ দেখা যায়। আর পুরুষদের মধ্যে উপসর্গ হিসেবে শ্বাসজনিত সমস্যা, ক্লান্তি, ঠাণ্ডা ও জ¦র দেখা দিচ্ছে বেশি। নারীদের ঘ্রাণশক্তি কমা, বুকে ব্যথা ও কাশি হয়।
গবেষক দলের একজন চার্লি স্টিভস বলেন, ‘করোনার উপসর্গগুলো জানা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই দরকার। কারণ একই পরিবারের বিভিন্ন বয়সীদের মধ্যে উপসর্গও ভিন্ন হতে পারে। তাই শুরু থেকেই পরীক্ষায় জোর দিতে হবে। বিশেষত যেহেতু করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট এখন অনেক বেশি সংক্রামক। ’
এ গবেষণায় জোর দিয়ে বলা হয়, মানুষ যাতে উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই করোনা পরীক্ষা করান। শুরুতেই পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা নিশ্চিত হলে একদিকে যেমন মৃত্যুঝুঁকি কমে, তেমনি সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠার সুযোগও বেশি থাকে।