ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের ‘আত্মহত্যা’র কারণ খুঁজে তদন্তে আলোচনায় আসে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড বা এলএসডি নামের একধরনের ভয়ানক মাদক। আবার তারই ধারাবাহিকতায় পাওয়া গেল নতুন মাদক ‘ব্রাউনি। তেল, মাখন আর সেদ্ধ গাঁজার নির্যাস দিয়ে তৈরি করা বিশেষ ধরনের মাদক এই ‘ব্রাউনি’। দেখতে হুবহু কেকের মতো। মাদকটি ব্যয়বহুল হওয়ায় উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা এর মূল ভোক্তা।
ব্রাউনি ঘটনায় এবারও ধরা পড়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্র। গ্রেফতারকৃতরা হলেন—আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) ছাত্র কাফিল ওয়ারা রাফিদ, ধানমন্ডির অ্যাডভান্সড প্রফেশনালসে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং পড়ুয়া কাজী রিসালাত হোসেন এবং ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউডা) চারুকলার শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সাইফ। গত বুধবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও পল্টন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের একটি টিম। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় দেড় কেজি ওজনের ৪০টি গাঁজার কেক।
গতকাল তাদের দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে ডিবি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মিশু বিশ্বাস। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা তিন জনই মাদকাসক্ত। এদের দুই জন নিজ নিজ বাসায় গাঁজার নির্যাস দিয়ে কেক তৈরি করে বিক্রি করত। এক জন এসব কেক ডেলিভারি করত। গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, বিশেষ এই মাদক দীর্ঘদিন ধরে মাদকসেবীরা ব্যবহার করলেও এটি ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভয়ংকর এলএসডি নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে সন্ধান মেলে ব্রাউনির।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিজুল হক বলেন, আমরা যাদের ধরেছি তারা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। এই ব্রাউনিগুলো তিন থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এটা খেলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত নেশা থাকে। এলএসডির মতো ব্রাউনিও অনলাইনে বিভিন্ন ক্লোজড গ্রুপের মাধ্যমে কেনাবেচা হয়।
অভিযান পরিচালনাকারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মিশু বিশ্বাস জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন, রাজধানীতে একাধিক চক্র গাঁজার নির্যাস দিয়ে কেক বানিয়ে মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করে আসছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা বুধবার বিকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি স্থান থেকে প্রথমে রাফিদ ও সাইফকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছে গাঁজার প্রায় ১৮টি কেক পাওয়া যায়। তারা সেগুলো ডেলিভারি দিতে যাচ্ছিল। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পল্টন এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে রিসালাত হোসেনকে গাঁজার ১২ পিস কেকসহ আটক করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, বছর দেড়েক আগে ইউটিউবে দেখে তারা গাঁজার কেক বানানো শিখেছে। প্রথমে নিজেরা খেলেও পরে বন্ধুদের মধ্যেও এর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। ব্যবসার শুরু তখনই। গাঁজার প্রতি পিস কেক তারা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করত। প্রথম দিকে কাছের বন্ধুদের কাছে বিক্রি করলেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ক্লোজ গ্রুপ তৈরি করে সেখানে বিক্রি শুরু করে তারা। অর্ডার দিলে কখনো নিজে বা কখনো ডেলিভারিম্যানদের মাধ্যমে এসব মাদক পাঠানো হতো।