এপিএস নিউজঃ রাজধানীর উত্তরা ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে আধিপত্য বিস্তার ও অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল বাপ্পির কিশোর গ্যাং গ্রুপ ডি কোম্পানির সদস্যরা।
স্কুল-কলেজে ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন অপকর্ম করতে এই গ্রুপে রয়েছে ৫০ জনেরও বেশি সদস্য। ডি কোম্পানির নেতৃত্বে প্রত্যক্ষ ভাবে ছিলেন রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি (৩৫)।
রোববার (৬ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
জানা যায়, গতকাল শনিবার (৫ জুন) রাতে উত্তরা ও টঙ্গী এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ডেয়ারিং কোম্পানি (ডি কোম্পানি) নামে কিশোর গ্যাং গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক মো. রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ও মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দানকারী মো. মইন আহমেদ নীরব ওরফে ডন নীরবসহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব-১।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. তানভীর হোসেন ওরফে ব্যাটারি তানভীর (২৪), মো. পারভেজ ওরফে ছোট পারভেজ (১৯), মো. তুহিন ওরফে তারকাটা তুহিন (২১), মো. সাইফুল ইসলাম শাওন (২৩), মো. রবিউল হাসান (২০), মো. শাকিল ওরফে বাঘা শাকিল (২৮), মো. ইয়াসিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াসিন (১৮), মো. মাহফুজুর রহমান ফাহিম (২২) ও ইয়াসিন মিয়া ইয়াসিন (১৯)।
এ সময় টঙ্গীতে তাদের বিভিন্ন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি চাপাতি, দুটি রামদা, তিনটি রড ও একটি ছুরি উদ্ধার করে র্যাব।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১ জুন টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকায় একটি ফুচকার দোকানে বসা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সেখানে বসে থাকা তুহিন ও তুষার নামে দুই যুবককে এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ডি কোম্পানির গ্যাং গ্রুপের দুই সদস্য। পরে এ ঘটনা বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ৩ জুন রাতে একই এলাকার একটি টেইলার্সসহ বিভিন্ন বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় তারা।
হামলায় টেইলার্সের মালিক, দোকানি রূপালী, তার স্বামী আরজু মিয়া ও অন্য একজন আহত হন। এরপর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী। এরপর র্যাব-১ ছায়া তদন্ত করে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ডিয়ারিং কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে।
তিনি জানান, গ্রুপটি উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় ছিনতাই, চুরি, মারামারি, মাদকের কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছিল। ডিয়ারিং গ্রুপে অন্তত ৫০ জন সদস্য রয়েছে। তাদের প্রত্যেককে প্রতি সপ্তাহে জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে দিত গ্রুপটির পৃষ্ঠপোষক লন্ডন বাপ্পি। নানা অপকর্মের মাধ্যমে বাপ্পির মাসিক আয় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতাকৃতরা ডি কোম্পানি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তারা এলাকায় মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার বিষয়ে স্বীকার করেছে। এছাড়া টঙ্গীতে সংঘটিত দুটি সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেছে তারা।
গ্রেফতারকৃতরা গ্রুপের অনেক সদস্যদের নাম-পরিচয় বলেছে। আমরা তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি। পাশাপাশি এই গ্রুপের সব সদস্যের ওপর র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। আমরা তথ্য পেয়েছি, লন্ডন বাপ্পির ছোট ভাই পাপ্পুর নামেও মামলা রয়েছে। সম্প্রতি একটি মারামারির ঘটনায় কারাগারে রয়েছে সে। এছাড়া গ্রেফতার আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে।