আসাদুজ্জামান আসাদ সিনিয়র স্টাফ রির্পোটারঃ
বেনাপোল কাস্টম হাউসে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২৮৫.৪৮ কোটি টাকার রাজস্ব বেশী আদায় হয়। যা শতকরা ৫২.০১% বেশী।
গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রথম ১১ মাসে অর্থাৎ মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২৪৩১.৭৩ কোটি টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রথম ১১ মাসে একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৭৫৬ .৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২৮৫.৪৮ কোটি টাকা বেশী রাজস্ব আদায় হয়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, গত দেড় বছর করোনার কারণে উচ্চ শুল্কহারের পণ্য আমদানি কমে গেছে। তারপরও ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী রাজস্ব আদায় হয়েছে।
দেশের সর্ববৃহৎ বড় স্থলবন্দর বেনাপোল। স্থল বন্দর দিয়ে সরকারের সবচেয়ে বেশী রাজস্ব আদায় হয় এখান থেকে। দেশের সিংহভাগ শিল্পকলকারখানা ও গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ’র শতকরা ৮০ শতাংশ কাচামাল আমদানি হয় এ বন্দর দিয়ে। রফতানি হয় অর্ধেক পরিমান। কাস্টম হাউসের সুত্র মতে, গত ৫ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন পণ্য। বিপরীতে রফতানি হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২১০ মেট্রিক টন পণ্য।বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্প-কারখানায় ব্যবহূত কাঁচামাল, মেশিনারী তৈরি পোশাক’র কাঁচামাল, কেমিক্যাল, মেশিনারি যন্ত্রাংশ, টায়ার, মোটর গাড়ি, বাসও ট্রাক চেসিস, ফল পিয়াজ, মাছ, চাউল সুতা ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। আর রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য, মাছ, সিরামিক ,মেলামাইন, তৈরি পোশাক ও বসুন্ধরা টিস্যু , মশারী, লুংগি, মাছ উল্লেখযোগ্য।
ভারতের সাথে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার বানিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। রফতানি হয় ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য। বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে এবারে রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়তে পারে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, করোনার কারণে উচ্চ শুল্ক হারে পণ্য আমদানি কমে গেছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুপাতে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন হলে দ্বিগুন পরিমান রাজস্ব আদায় সম্ভব হতো।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, দেশের স্থলপথে আমদানি-রফতানির বানিজ্যের ৮০ শতাংশ পণ্য আমদানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। তবে কাংক্ষিত অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় অনেকে এ পথে বাণিজ্যের আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বন্দরের সমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, বন্দরের জায়গা অধিগ্রহণের পাশাপাশি বন্দরে নির্মান করা হয়েছে কয়েকটি আধুনিক পণ্যাগার। সিসি ক্যামেরার কাজও চলছে। বন্দরের নিরাপত্তা বাড়াতে উঁচু প্রাচীরও নির্মাণ করা হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, দেশে করোনার প্রভাব চলছে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে। চলতি অর্থ বছরে আমদানি বাড়লেও উচ্চ শুল্কহারের পণ্য কম এসেছে। আমরা ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে। এরই মধ্যে বন্দর কর্তৃপকে অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছি। বন্দরের সমতা বাড়লে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়ে রাজস্ব আদায় দ্বিগুন করা সম্ভব।