করোনার ধাক্কা কাটাতে আসছে বাজেটে কর হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর দিকে ঝুঁকছে সরকার। চলতি বছরে প্রত্যাশিত রাজস্ব প্রাপ্তি না হওয়ার মধ্যেও আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৪ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।
যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন কর না বাড়াতে গত সপ্তাহে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এদিকে করোনায় খাদ্যশস্যের মজুত তলানিতে থাকায় খাদ্য আমদানিতে বরাদ্দ বাড়ছে। এ খাতে প্রায় পৌনে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনার কারণে সার্বিক ব্যবসাবাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রাজস্ব আদায়ও কমেছে। যে কারণে দৈনন্দিন ব্যয় মিটিয়ে দু-একটি ছাড়া অন্যান্য মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নও পিছিয়েছে। এ অবস্থায় নতুন বাজেট দিতে গিয়ে স্বাভাবিক গতিতেই রাজস্ব টার্গেট বাড়ছে। তবে বরাবরের মতোই লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সংশয় থাকছে।
রাজস্ব আদায়ের এই প্রক্ষেপণ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে বাজেট প্রক্ষেপণের আগে করোনা পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী, আসছে বাজেটে করপোরেট কর হার বাড়ছে না। ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যাতে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে, সে কারণেই করপোরেট কর হার না বাড়ানোর পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রেও তা অপরিবর্তিত থাকবে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে কর হার ২৫ শতাংশ এবং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির জন্য সাড়ে ৩২ শতাংশ কর হার ধার্য রয়েছে।
এছাড়াও নিত্যপণ্য আমদানিতে কর হার কমবে। ব্যক্তিশ্রেণির আয়করের নিম্নসীমাও বাড়তে পারে। করোনার কারণে এই স্তরে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকের বেতন কমেছে। পণ্যমূল্য বাড়ায় দৈনন্দিন জীবনযাপনের ব্যয় মেটানো কষ্টকর হওয়ায় সর্বনিম্ন আয়কর সীমা বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। যদিও করের আওতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া নতুন বছরেও অব্যাহত থাকবে। তাতে করভার বাড়বে বই কমবে না বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। যেভাবে চলতি বছরেও লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। বরং বছরের শুরু থেকেই ব্যয়ের চাপ কমানো শুরু করে সরকার। বাজেট সংশোধনের আগেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়—কোনোভাবে নতুন করে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে না। আর কোনোক্রমইে উন্নয়ন খাতের অব্যয়িত অর্থ ভিন্ন খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। এ ধরনের মোট ২৪ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে।
চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম আট মাস, অর্থাত্ জুলাই-মার্চ পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৪ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য স্থির করা হচ্ছে।
খাদ্য আমদানিতে বাড়ছে বরাদ্দ
কোভিডের কারণে চলতি বছর খাদ্যশস্যের মজুত কমেছে। আগামী বছরেও চাল ও গমের আমদানি বাড়াতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাই বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই। চলতি বছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধন করে করা হয়েছে ৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। নতুন বছরের জন্য সংশোধিত বরাদ্দেরও ৬৪ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে ৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, এপ্রিল পর্যন্ত খাদ্যশস্যের মজুত রয়েছে ৫ লাখ ৪৭ হাজার টন যা কমপক্ষে ১০ লাখ টন থাকার কথা। এ দিকে, খুচরা বাজারে চালের মূল্যও বাড়ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্প্রতি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকও হয়েছে। তাতে আগামী অর্থবছরে চাল ও গমের আমদানি বাড়াতে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়।