রাজধানীর উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে পার্টিতে মদপানের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় নিহত ওই ছাত্রীর বান্ধবী ফারজানা জামান নেহা ওরফে ডিজে নেহাকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) মোহাম্মদপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আফসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বুধবার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে নেহাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক সত্যব্রত শিকদার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
এর আগে শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) নেহাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। সে সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বৃহস্পতিবার রাতে (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আজিমপুর এলাকার একটি বাসা থেকে নেহাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিহত শিক্ষার্থীর বাবার করা মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি।
এর আগে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ৩১ জানুয়ারি নিহতের বাবা মামলা করেন। ওইদিন চারজনকে আসামি করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছিলেন নিহত তরুণীর বাবা। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো একজনকে আসামি করা হয়।
ওই ছাত্রীর বাবার মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় মর্তুজা রায়হান ওই তরুণীকে নিয়ে মিরপুর থেকে আরাফাতের বাসায় যান। সেখানে স্কুটার রেখে আরাফাত, ওই তরুণী এবং রায়হান একসঙ্গে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বু সুট রেস্টুরেন্টে যান। সেখানে আগে থেকেই আরেক আসামি নেহা এবং একজন সহপাঠী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আসামিরা ওই তরুণীকে জোর করে ‘অধিক মাত্রায়’ মদপান করান।
মদপানের একপর্যায়ে ওই তরুণী অসুস্থ বোধ করলে রায়হান তাকে মোহাম্মদপুরে ওই তরুণীর বান্ধবী নুহাত আলম তাফসীরের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে ওই তরুণীর সঙ্গে রায়হানের একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হয়।
এক পর্যায়ে রাতে ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে বমি করলে রায়হান তার আরেক বন্ধু অসিম খানকে ফোন দেন। সেই বন্ধু পরদিন এসে তরুণীকে প্রথমে ইবনে সিনা ও পরে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ২ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তার মৃত্যু হয়।
ওইদিনই ৪ জনকে আসামি করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন নিহত তরুণীর বাবা। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ১ জনকে আসামি করা হয়। ৩১ জানুয়ারি মর্তুজা রায়হান চৌধুরী ও নুহাত আলম তাফসীরের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩ জন গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে রয়েছে। ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক বলছেন, মারা যাওয়া ওই ছাত্রীর শরীরে কোনো আঘাত বা জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। যাতে মনে হচ্ছে, ভেজাল মদের বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।