জেএসসির পর এসএসসিতে জিপিএ-৫; এইচএসসি পরীক্ষায়ও ভালো করার প্রত্যয়। সেভাবেই নিজেকে গড়ে তোলেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা বাতিল হলেও অটোপাস মূল্যায়নে আশা ছিল জিপিএ-৫ হবে। কিন্তু কাক্সিক্ষত ফলাফল হয়নি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা বোর্ডের এক শিক্ষার্থীর। তার প্রশ্ন, কেন এমন হলো? এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থাকলেও এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে পড়েছি। অটোপাস বিবেচনার যে মূল্যায়ন, তাতেও জিপিএ-৫ হওয়ার কথা আমার। কেন হলো না, জানি না। এই শিক্ষার্থীর মতো দেশের বিভিন্ন বোর্ডের ৩৯৬ জন জিপিএ-৫ বঞ্চিত হয়েছেন। অথচ তারা সবাই জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
গতকাল শনিবার এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ফলাফল তৈরির ক্ষেত্রে সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতিসহ কয়েকটি কারণে এমন ফলাফল হয়েছে।’
ফল প্রকাশের আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ৭৫ শতাংশ বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিবেচনা করে নির্ধারণ হবে এইচএসসি ও সমমানের মূল্যায়নের ফলাফল। গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, নতুন এ পদ্ধতিতে জেএসসি, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ নেই, এমন ১৭ হাজার ৪৩ পরীক্ষার্থী এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। আর জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও ৩৯৬ পরীক্ষার্থী এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি। তাদের বেশির ভাগ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মঞ্জুরুল কবীর বলেন, ‘জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় যারা চতুর্থ বিষয় মিলিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিল, এবার তাদের অনেকে পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পায়নি।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবার জেএসসি, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিষয় ‘ম্যাপিং’ করে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের ফল মূল্যায়ন করা হয়েছে। সাধারণভাবে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমানের আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসিতে বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভাগ (গ্রুপ) পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ের প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনায় নিয়ে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি পরীক্ষার গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত বা জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত বা জীববিজ্ঞান বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষায় বিভাগের তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। ফল উন্নয়নের জন্য এবং আংশিক বিষয়ের (এক বা একাধিক বিষয়) পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য বিষয়ের নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও ওপরের নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে বলে জানান তারা।
গতকাল সন্ধ্যায় কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম দেশ রূপান্তরকে জানান, এমন ফলাফল মূলত সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতির কারণে হয়েছে। যেমন যে শিক্ষার্থী জেএসসিতে একটি বিষয়ে ৮০ নম্বর পেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে, এসএসসিতেও সে একই বিষয়ে ৮০ পেয়ে পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পেল। আবার কোনো কোনো বিষয়ে হয়তো সে ৯০ নম্বর পেয়েও জিপিএ-৫ পেয়েছে। দুই স্তরে একই বিষয়ে যারা ৮০ নম্বর পূর্ণ করতে পেরেছে, তারা এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু যারা উচ্চ মাধ্যমিকে বিভাগ পরিবর্তন করেছে, তাদের অনেকেই ৮০ নম্বরের ওপরে নম্বর নিয়ে জিপিএ-৫ পায়নি। কারণ, দুই স্তরের নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং ৭৫ শতাংশ নিলেও বিভাগ পরিবর্তনের কারণে কিছু বিষয় মেলানো সম্ভব হয়নি। এ জন্য ওই সব শিক্ষার্থীর অনেকেরই ৮০ নম্বর পূর্ণ হয়নি। তবে এ সংখ্যা খুব বেশি না, মাত্র ৩৯৬ জন। এর মধ্যে কুমিল্লা বোর্ডের ২২ জন। ফল নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।