খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের গণছাড়ে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে ২০ হাজার ৭০৩টি আবেদনের বিপরীতে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৩০৭ জন খেলাপি গ্রাহককে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ১৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল বা নিয়মিত করা হয়েছে। আর আদায় করা ডাউন পেমেন্টের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৪৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে ২০১৯ সালের ১৬ মে ঋণ পুনঃ তফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়। এ সার্কুলারের আওতায় যেসব ঋণ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর মন্দমানে শ্রেণি করা রয়েছে সেসব খেলাপির অনুকূলে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আদায় সাপেক্ষে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদে পুনঃ তফসিল এবং ৩৬০ দিন মেয়াদে এককালীন এক্সিট সুবিধা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, খেলাপিদের গণছাড়ের কারণে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আবার লাখো কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পুনঃ তফসিল ও এককালীন এক্সিট নীতিমালার আওতায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ২০ হাজার ৭০৩টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে পুনঃ তফসিল সংক্রান্ত আবেদন ছিল ১১ হাজার ২৬৪টি। আর এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত আবেদনের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৩৯। এসব আবেদনের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৩০৭টি নিষ্পত্তি করেছে ব্যাংকগুলো। এর বিপরীতে মোট ১৯ হাজার ৬০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল বা নিয়মিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সাত হাজার ৩২৮ জন নিয়েছেন পুনঃ তফসিল সুবিধা, যাঁদের ১৮ হাজার ২০২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার ঋণ নিয়মিত করা হয়েছে। অন্যদিকে পাঁচ হাজার ৯৭৯ জন নিয়েছেন এককালীন এক্সিট সুবিধা, যাঁদের এক হাজার ৪০২ কোটি টাকা নিয়মিত করা হয়েছে।
সূত্র মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সর্বাধিক ১০ হাজার ৫১২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করেছে। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো করেছে সাত হাজার ২২১ কোটি ২১ লাখ টাকা। অন্যদিকে এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত সুবিধায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নিয়মিত করেছে ৯৬১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো করেছে ৩০৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যে আরো দেখা যায়, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৫৪৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা আদায় করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে পুনঃ তফসিল থেকে ৪৮৪ কোটি ৭৮ লাখ ও এককালীন এক্সিট সুবিধার আওতায় ৬৩ কোটি টাকা।
২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে খেলাপিদের ব্যাপক সাড়া মেলায় এক বছরের হিসাবে ২০১৯ সালে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলে রেকর্ড করা হয়েছে। ওই বছর প্রায় ৫২ হাজার ৭৭০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়। এর মধ্যে ২ শতাংশে ডাউন পেমেন্টের আওতায় পুনঃ তফসিল হয় ১৮ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। এর আগে কোনো বছরই এই পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল হয়নি। এর আগে ২০১৮ সালে ২৩ হাজার ২১০ কোটি, ২০১৭ সালে ১৯ হাজার ১২০ কোটি, ২০১৬ সালে ১৫ হাজার ৪২০ কোটি ও ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে। সব মিলে পাঁচ বছরে পুনঃ তফসিল করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায়।
এদিকে বিপুল অঙ্কের ঋণ পুনঃ তফসিল করায় গত বছরের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ কমে দাঁড়ায় ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বা ৯.৩২ শতাংশ। তবে জুনে খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা বা ৯.১৬ শতাংশ।